সিরাজগঞ্জের চৌহালীর এনায়েতপুরে উত্ত্যক্ত করার মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামিকে ছাড়িয়ে নিতে তিন আওয়ামী লীগ নেতার তদবিরের অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের তদবিরে পুলিশ আসামি না ছাড়ায় বুধবার দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের দিয়ে থানার সামনে বিক্ষোভ করানোর অভিযোগ উঠেছে ওই আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে।
ওই তিন আওয়ামী লীগ নেতা হলেন এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাশেদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অজগর আলী ও যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন মামলার প্রধান আসামি চৌহালী উপজেলার ব্রাহ্মণ গ্রামের আজিজুল হক (২০), খোকশাবাড়ি গ্রামের আশরাফুল ইসলাম (২৭), শাহজাদপুরের গোপীনাথপুর গ্রামের নাজমুল হোসেন (২৫) ও আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়া (৪২)।
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে সব সময় নারীদের উত্ত্যক্তকারীকে বয়কট করি। তিরস্কার করি। আমার দলের কোনো নেতা যদি এমন কোনো বিষয়ে গ্রেপ্তার হওয়া আসামির পক্ষ নিয়ে কথা বলে, তাহলে হয়তো না বুঝে বা ভুল করে সেটি করেছে। আমি এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলব।’
পুলিশ ও মামলার বাদী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় এক সাংবাদিকের মেয়ে চৌহালীর এক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। তাঁর মেয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে আজিজুল নামের এক বখাটে উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি মেয়েটির বাবা জেনে ওই বখাটেকে বুঝিয়ে তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতে নিষেধ করেন। এতে বখাটে আজিজুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এর জের ধরে গত মঙ্গলবার বিকেলে মেয়েটি স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে চৌহালীর কেজির মোড় এলাকায় রাস্তার পাশে ওত পেতে থাকা আজিজুল আবারও তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। একপর্যায়ে মেয়েটির হাত ও ওড়না ধরে টানাটানি করে এবং তার পথ রোধ করে আটকে রাখে।
মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার খবর পেয়ে বাবা দৌড়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে এর প্রতিবাদ করলে বখাটে আজিজুলসহ আরও কয়েকজন মিলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর আক্রমণ করে বেধড়ক মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ওই মেয়ের বাবা বাদী হয়ে সাতজনকে আসামি করে থানায় মামলা করলে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
ওই চারজনকে গ্রেপ্তারের পর থেকে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের ওই তিন নেতা তাঁদের ছাড়াতে তদবির শুরু করেন। এতে কাজ না হলে বিষয়টি মীমাংসা করে নিতে মামলার বাদীকে চাপ দেন। তাঁদের তদবিরে পুলিশ আসামি না ছাড়ায় বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্থানীয় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের দিয়ে থানার সামনে বিক্ষোভ করিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন।
মামলার বাদী অভিযোগ করে বলেন, ‘মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে মামলা করায় আমাদের এখন হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
এনায়েতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার এক নম্বর আসামিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হলে আওয়ামী লীগের ওই তিন নেতা এ বিষয়ে আপস করে আসামিদের ছেড়ে দিতে আমাকে প্রস্তাব করেন। এতে কোনো লাভ না হওয়ায় বুধবার স্থানীয় কিছু জনতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ব্যবস্থা করে এনে থানার সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালান তাঁরা। পরে সেটি নিয়ন্ত্রণ করে দ্রুত আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়।’
এ বিষয়ে কথা বলতে ওই তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে একাধিকবার মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলেও তাঁরা তা ধরেননি।