টেকনাফের নাফ নদীর সীমান্তের ওপারে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে
টেকনাফের নাফ নদীর সীমান্তের ওপারে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে

সীমান্তের ওপারে রাতভর বিস্ফোরণের শব্দ, টেকনাফে আতঙ্ক

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গতকাল শনিবার রাতভর বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে এসেছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায়। এতে অনেকটাই নির্ঘুম রাত কেটেছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গতকাল রাত ৮টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে এসেছে। এ সময় টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের আশপাশের এলাকায় একাধিক যুদ্ধবিমান চক্কর দিতে দেখা যায়।

বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসার বিষয়টি টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপির) চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী, সদর ইউপির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ও সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোসেন প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা বলেন, প্রায় ৯ মাস ধরেই রাখাইন রাজ্যে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। এতে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে টেকনাফের বাসিন্দাদের আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটছে।

তাঁরা বলেন, গতকাল রাতে মর্টারের শেল ও বোমার মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দে টেকনাফের ঘরবাড়ি কেঁপে উঠেছে। বিগত ৯ মাসের মধ্যে গত রাতে বিস্ফোরণের শব্দ সবচেয়ে ভয়ংকর মনে হয়েছে।

হ্নীলার দমদমিয়া এলাকায় বাসিন্দা আজিজুর রহমান, টেকনাফ পৌরসভার কাযুকখালীয়া পাড়ার এহতেশামুল হক ও সাবরাং লেজিরপাড়ার আবদুল হামিদ বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে রাখাইনে দুই পক্ষের যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লেও গত রাতের মতো বোমা নিক্ষেপের ঘটনা এর আগে ঘটেনি। বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ও উড়োজাহাজের চক্করে সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে টেকনাফের একটি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন রাখাইনের বাসিন্দা আবদুল মালেক। তিনি বলেন, মিয়ানমারের মংডু শহরের উকিলপাড়া, ফয়েজীপাড়া, সুধাপাড়া, নাপিতের ডেইল, নয়াপাড়া, সিকদারপাড়া, হারিপাড়া এলাকা রোহিঙ্গা অধ্যুষিত। সংঘাতের কারণে এসব এলাকার বেশির ভাগ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। মংডুর আশপাশে থাকা আড়াই লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে দেড় লাখের মতো বাসিন্দা এলাকা ছেড়েছেন।

সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আরাকান আর্মি ইতিমধ্যে মংডু টাউনশিপের আশপাশে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) বেশ কিছু সীমান্তচৌকি দখলে নিয়েছে। বর্তমানে মংডু টাউনের অভ্যন্তরে থাকা দেশটির সেনাবাহিনী ও বিজিপির কিছু স্থাপনা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা।

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের ওপারে সংঘাতের জেরে কেউ যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তের লোকজনকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।