রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে দল থেকে অপসারণের দাবিতে আবার মানববন্ধন হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ১৫ মিনিটের এই কর্মসূচি নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। তবে এবার আয়োজক হিসেবে ব্যানারে ‘রাজশাহী আওয়ামী পরিবার’–এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ‘সচেতন রাজশাহীবাসী’র ব্যানারে এই কর্মসূচি পালনকালে হামলা করে ব্যানার কেড়ে নিয়ে কর্মসূচি পণ্ড করে দেওয়া হয়েছিল।
আজ মানববন্ধনের ব্যানারে আগের দিনের মতোই লেখা ছিল ‘ডাবলু সরকারের নোংরা ভিডিও, রাজনীতিতে অশনিসংকেত ও সমাজের জন্য বিপজ্জনক, অবিলম্বে ডাবলু সরকারকে রাজনীতি থেকে অপসারণ করতে হবে।’ আরেকটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘নীতিনৈতিকতা–বিবর্জিত রাজনীতির দুষ্টক্ষত ডাবলু সরকারকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
ডাবলু সরকারের ছবিতে ক্রস চিহ্ন দেওয়া কয়েকজনের হাতে ধরা ছোট ছোট ফেস্টুনে লেখা ছিল ‘ডাবলুর পেছনের গডফাদার কে, রাজশাহীবাসী জানতে চায়।’, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী, নির্বাচনের বছরে কারও দ্বারা দল বিব্রত হয়, এমন কাউকে এক সেকেন্ডও দলে রাখা যায় না।’
এ কর্মসূচি উপলক্ষে বেলা ১১টা থেকে পুলিশ সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়। বেলা সাড়ে ১১টায় এ কর্মসূচি শুরু করার কথা ছিল। সেখানে আগে থেকে অপর একটি সংগঠনের মানববন্ধন কর্মসূচি চলছিল। তারা ১০ মিনিট বিলম্ব করার কারণে এই কর্মসূচি ১১টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়। সেদিনের মতোই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর রাজশাহী মহানগর শাখার সাবেক সভাপতি আবু রায়হান। তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কর্মসূচিতে তিনিসহ মোট তিনজন বক্তা বক্তব্য দেন।
‘রাজশাহী আওয়ামী পরিবার’–এর পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি আয়োজন করার কথা বলা হলেও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কেউ এই কর্মসূচিতে ছিলেন না। যদিও আয়োজক আবু রায়হান মাসুদ তাঁর বক্তব্যে দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ রয়েছে। তারা ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না।
আবু রায়হান তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই কলঙ্ক যেন রাজশাহী আওয়ামী লীগ, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গায়ে না লাগে, নির্বাচনের বছরে যেন কারও কাছে বিব্রত হতে না হয়, সেই জন্য ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার যাঁরা হামলা করে ব্যানার কেড়ে নিয়েছিলেন, তাঁদের কড়া সমালোচনা করে আবু রায়হান বলেন, ‘আমরা চাই না, আগামী নির্বাচনে আমাদের ওপরে কোনো ধরনের কলঙ্ক নেমে আসুক, বিরোধী দল কোনো দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দিক, এই ধুয়া তুলে জামায়াত–শিবির চক্র আমাদের চরিত্র নিয়ে কোনো কথা বলুক।’
আবু রায়হান কর্মসূচি চলাকালে ডাবলু সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘ভিডিওটি যে আপনার নয়, আপনি তা আজও প্রমাণ করতে পারেননি।’ দুই দিন আগের কর্মসূচিতে ডাবলু সরকারের ভাই সেডু সরকারের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে ব্যানার কেড়ে নেওয়া হয়। আজকের কর্মসূচি থেকে সেডু সরকারকে উদ্দেশ করে আবু রায়হান বলেন, তিনি রুয়েটে চাকরি করেন। অথচ অফিস চলাকালে কীভাবে এসে তিনি তাঁদের কর্মসূচিতে হামলা করেন। তিনি বলেন, রুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে তাঁরা আইনি নোটিশ পাঠাবেন। এ ব্যাপারে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কর্মসূচি শেষে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে দিতে পশ্চিম দিকে চলে যান। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহরাওয়ার্দী হোসেন। সেই অশ্লীল ভিডিওটি ডাবলু সরকারের দাবি অনুযায়ী এডিট ‘সম্পাদনা’ করা কি না, জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। তাই তদন্তাধীন বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার তাঁকে নিয়ে একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে নগরের বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। এতে তিনি ভিডিওটিকে এডিট করা বলে দাবি করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, একটি অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক পেজে কে বা কারা তাঁকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে এডিটিংয়ের মাধ্যমে মিথ্যা, অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে ডাবলু সরকারের সম্মানহানি করার চেষ্টা করছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এই ভিডিও নিয়ে মানুষের মুখে মুখে আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। ম্যাসেজিং অ্যাপ হোটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের স্মার্টফোনে এই ভিডিওটি পাঠানো হচ্ছে।
আজ শনিবারের মানববন্ধনের ব্যাপারে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও বৃহস্পতিবারের মতো ডাবলু সরকারের মুঠোফোনটি ব্যস্ত পাওয়া যায়। তিনি আজ ফোন ধরেননি। এ কারণে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।