কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের (রেনু) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। দুই কোটি পাঁচ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণ মওকুফে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টার সই জালের মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি হয়। গত ১৮ জানুয়ারি সাজা পরোয়ানাটি কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় গ্রহণ করলেও বিষয়টি জানা যায়নি।
গতকাল সোমবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ৪ জানুয়ারি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৮ সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করেন। রফিকুল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, মেসার্স এলিট আয়রন অ্যান্ড স্টিল জিপি শিট লিমিটেডের কাছে ঋণের দুই কোটি পাঁচ লাখ টাকা পায় উত্তরা ব্যাংক। পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওই ঋণ মওকুফ করে দেওয়ার কথা বলে কোম্পানিটির কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা নেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমানের সই জাল করে ঋণ মওকুফের ব্যবস্থা নিতে উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর একটি চিঠি ইস্যু করেন। চিঠিতে ড. মসিউর রহমানের জায়গায় ডা. মশিউর রহমান লেখায় উত্তরা ব্যাংকের এমডির সন্দেহ হয়। তিনি চিঠিটি যাচাইয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠান। সেখানে প্রমাণিত হয়, এমন কোনো চিঠি ইস্যু করা হয়নি।
এ ঘটনায় সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল করিম ২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল ঢাকার বংশাল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় একই কর্মকর্তা ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলামসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন মেসার্স এলিট আয়রন অ্যান্ড স্টিল জিপি শিট লিমিডেট পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন, চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন, পরিচালক আমজাদ হোসেন ও মনোয়ার হোসেন।
২০১৫ সালের ১১ জুন মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে অপর আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।
পরে আদালত এই মামলায় দণ্ডবিধির ৪৬৮ ধারায় উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই হাজার টাকা জরিমানা; অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে বলেন, ‘আমাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য আর নির্বাচন এলেই প্রতিপক্ষ খোঁজে খোঁজে এসব পুরোনো মামলা বের করে আনে। সামনে ৮ মে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আবারও চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করব। এর আগেও বিভিন্ন সময় আমার বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা দেওয়া হয়েছে।’
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেয়েছি। সেটি নিরীক্ষার পর অন্যান্য সাজা পরোয়ানার মতোই আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’