জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নূরুল আলমকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। এ ছাড়া তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক নিয়োগে বাধা দেওয়া ও প্রার্থীদের উপাচার্যের দপ্তর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় উপাচার্যের দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে গেট আটকে রাখেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএসের শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে প্রার্থীদের বের করে দিয়ে গেট আটকে দেন। এ সময় তাঁরা প্রার্থীদের বলতে থাকেন, ‘আজকে বোর্ড হবে না, আপনারা চলে যান।’ পরে দুপুর ১২টায় উপাচার্যের নির্দেশে তাঁর একান্ত সচিব গৌতম কুমার বিশ্বাস গিয়ে অনিবার্য কারণে নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের বিষয়ে প্রার্থীদের জানান। এ ছাড়া বোর্ড কবে বসানো হবে, তা পরবর্তী সময় জানানো হবে বলে প্রার্থীদের জানিয়েছেন তিনি।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন উপাচার্য মো. নূরুল আলম। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) শেখ মনজুরুল হক, সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) মোস্তফা ফিরোজ, কোষাধ্যক্ষ রাশেদা আখতার ও প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান উপস্থিত ছিলেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদিয়া আফরিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সেখানে বিভাগের অন্য তিন শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমানের নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপাচার্য মো. নূরুল আলমকে অবরুদ্ধ করেছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক আশরাফুল গোলদার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাইরে কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাই না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অনেকবার জানিয়েছি। স্যার আজকে অপারগ হয়ে জানিয়েছেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লোকদের চান, কিন্তু অনেকের চাপে তা সম্ভব হয় না। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরিপন্থী লোকদের শিক্ষক হিসেবে চাই না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের এই ধরনের কথা বলার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, ‘আমি এ ধরনের কোনো কথা বলিনি। আমি অপরাগতা কেন প্রকাশ করব। যারা বিভাগের ভালো শিক্ষার্থী তাদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হবে।
উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ যতগুলো নিয়োগ হয়েছে তার মধ্যে অনেকে বঙ্গবন্ধু আদর্শ এবং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির লোকজন ছিল। আমরা চাইনা স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি নিয়োগ হোক। তাই আজ উপাচার্য স্যারের সাথে দেখে করতে গিয়েছিলাম।’
এদিকে ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএসের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে বাধা প্রদান ও প্রার্থীদের উপাচার্যের দপ্তর থেকে বের করে দেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ওই ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের ইনস্টিটটিউটে শিক্ষক নিয়োগ খুবই জরুরি। একটি শূন্য পদের বিপরীতে ২৩ জন ক্যান্ডিডেট ছিল। তবে বোর্ড স্থগিত হওয়া খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।’