যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের শহীদ আসাদ হল দখলে নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগের একাংশ। ছাত্রাবাসটি দেড় বছর ধরে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারীদের দখলে ছিল।
রোববার দুপুরে শাহীন চাকলাদারের অনুসারীরা ছাত্রাবাসটি দখলে নেন। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুপুরের পর থেকে ক্যাম্পাসে দুই পক্ষই বহিরাগত ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মহড়া দিয়েছে। হলটি দখলে নেওয়ার সময় কলেজ সরকারি ছুটিতে রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সদ্য শেষ হওয়া যশোর সদর উপজেলা নির্বাচনে শাহীন চাকলাদারের সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় শহরে তাঁর আধিপত্য বেড়েছে। অন্যদিকে নাবিলের প্রার্থী পরাজিত হওয়ায় তাঁর অনুসারীরা কিছুটা নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছেন। এ সুযোগে শাহীনের অনুসারীরা ছাত্রাবাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এর আগে ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি দীর্ঘ আট বছর ধরে নিয়ন্ত্রণে থাকা শাহীনের অনুসারীদের কাছ থেকে ছাত্রাবাসটি নিয়ন্ত্রণে নেন কাজী নাবিলের অনুসারীরা।
আসাদ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দিয়ে হলটি দখলে রেখে নিয়ন্ত্রণ করতেন নাবিলের অনুসারী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা শেখ জাহিদ হোসেন। রোববার দুপুর ১২টার দিকে শাহীন চাকলাদারের অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদার, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবিরসহ ছাত্রলীগের ৩০ থেকে ৪০ জন নেতা-কর্মী ক্যাম্পাসে উপস্থিত হন। এ সময় ছাত্রাবাসের দেখভালের দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষকও উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের দ্রুত জিনিসপত্র নিয়ে নেমে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। দুপুরে আসাদ হলে অবস্থানরত কলেজের নাবিল অনুসারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হল ত্যাগে বাধ্য হন।
কাজী নাবিলের অনুসারীদের পক্ষে আসাদ হল নিয়ন্ত্রণ করতেন কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে শাহীনের চাচাতো ভাই ফন্টু চাকলাদার বিজয়ী হয়েছেন। পরে তাঁদের অনুসারীরা বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছিলেন হল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার। ঈদের ছুটিতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী গ্রামে। চতুর্থ বর্ষে যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা এসেছিলেন। আজ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল বহিরাগত আসাদ হলে এসে বিভিন্ন কক্ষের তালা ভাঙেন। হলে এসে তাঁরা উপস্থিত ছাত্রদের বলেন, “এই ছাত্রাবাস এখন থেকে শাহীন ভাইয়ের ছেলেরা নিয়ন্ত্রণ করবে। তোরা যারা আছিস সবাই চলে যা।”’
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, আসাদ হলে ১২০ জনের আসন থাকলেও জেলা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নৈরাজ্য, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, হানাহানিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেউ থাকেন না। এমনকি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হলে মাদক সেবনের অভিযোগও রয়েছে। ফলে ১২০ আসনের বিপরীতে বর্তমানে ছাত্রাবাসে থাকেন ২৫ থেকে ৩০ জন। তার মধ্যে আবার বেশির ভাগ অছাত্র, বহিরাগত। তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমএম কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, কলেজের আশপাশে দুই শতাধিক ব্যক্তিমালিকানাধীন ছাত্রাবাস বা মেস রয়েছে। এসব মেস নিয়ন্ত্রণ করে আসাদ হল ছাত্রলীগ। মূলত দলীয় কর্মসূচিতে জনসমাগম ঘটাতে সাধারণ ছাত্রদের মিছিলে যেতে বাধ্য করে আসাদ হল ছাত্রলীগ।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদার বলেন, ‘আসাদ হলে যারা বর্তমানে থাকে, তাদের বেশির ভাগ অছাত্র। তাদের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা থাকতে পারে না। ২০ জন শিক্ষার্থীও থাকে না। তাই আমরা চেয়েছি ছাত্রদের জায়গা ছাত্ররাই নিয়ন্ত্রণ করবে। যারা সেখানে ছিল, নিজ নিজ মালামাল নিয়ে নেমে গেছে। কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়নি। এমনকি জোর করে নামিয়েও দেওয়া হয়নি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলেন, ‘কে বা কারা হল দখল করেছে জানা নেই। আমাদের কোনো কর্মী বা নেতা কাউকে মিছিল-মিটিং ও সমাবেশে যোগ দিতে বাধ্য করে না। দলের প্রতি ভালোবাসা থেকে তারা কর্মসূচিতে আসে। এখানে কোনো প্রভাব আধিপত্যের কোনো বিষয় না।’
কাজী নাবিল আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছেন। হল দখল নিয়ে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।