কক্সবাজার উখিয়ার বালুখালীতে ভূমিধসের ঝুঁকিতে একটি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির
কক্সবাজার উখিয়ার বালুখালীতে ভূমিধসের ঝুঁকিতে একটি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির

ঘূর্ণিঝড় রিমালের

কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে ভূমিধসের ঝুঁকিতে ২৭ হাজার পরিবার

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গার ঘরবাড়ি ত্রিপলের ছাউনি ও বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি। এর মধ্যে উখিয়ার পাঁচটি আশ্রয়শিবিরে প্রায় ২৭ হাজার পরিবারের অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। আশ্রয়শিবিরগুলো উঁচু পাহাড়ে গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে আজ রোববার সকাল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল প্রচণ্ড উত্তাল হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে কক্সবাজারের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। বেলা ১১টা পর্যন্ত হালকা বাতাসের সঙ্গে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাতাসের গতি ও বৃষ্টি বাড়তে থাকে। আশ্রয়শিবিরসহ কক্সবাজার উপকূলজুড়ে প্রচারণা শুরু করে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কক্সবাজার উপকূলকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমাল আজ সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে এগিয়ে ঘনীভূত হতে পারে।
প্রস্তুত ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবী, চলছে প্রচারণা

উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৯) আজ সকাল ৯টা থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা শুরু করেন ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ প্রচারণা। এ সময় আশ্রয়শিবিরগুলোয় লাল নিশান ওড়ানো হয়। বিকেল পাঁচটার আগে পাহাড়ের উঁচুতে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের নিচু বা সমতলের বিভিন্ন কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বলা হয়। তবে বেলা একটা পর্যন্ত কারও সাড়া মেলেনি। কয়েকটি পরিবারের রোহিঙ্গারা জানান, ভারী বর্ষণ হলে ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি শুরু হয়নি, বাতাসের গতিও তেমন নেই।

দুর্যোগ মোকাবিলায় আশ্রয়শিবিরগুলোয় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ভয়ের কারণ হলো ঘরবাড়ির চাল উপড়ে পড়া। আশ্রয়শিবিরে অধিকাংশ ঘর বাঁশ ত্রিপল ও টিনের তৈরি। তীব্রগতির ঝড়ে এসব ঘর উপড়ে পড়তে পারে, তা ছাড়া ভারী বৃষ্টি শুরু হলে উখিয়ার পাঁচটি আশ্রয়শিবিরে ভূমিধসের ঘটনা ঘটতে পারে। তাতে অন্তত ২৭ হাজার পরিবার ঝুঁকিতে পড়বে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে এসব ঘরের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জালাল আহমদ বলেন, উখিয়ার বালুখালী, মধুরছড়া, লম্বাশিয়া, জুমুশিয়া ও কুতুপালং আশ্রয়শিবির গড়া হয় কয়েক হাজার একরের উঁচু পাহাড় কেটে। ভারী বৃষ্টি হলে ভূমিধসে রোহিঙ্গা বসতি বিলীন হয়। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত এবং ভূমিধসের ঘটনায় ৯টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, ৪টি মসজিদ ও ২০টি শৌচাগারসহ ৭০০টি ঘরবসতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পাঁচটি আশ্রয়শিবিরে থাকছেন প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা।