উখিয়ায় র‌্যাবের টহল দলের ওপর হামলা, গুলি ছুড়ে নিয়ন্ত্রণ

কক্সবাজারের উখিয়ায় র‌্যাবের টহল দলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে র‌্যাব। ইটপাটকেলের আঘাতে র‌্যাবের একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল রোববার মধ্যরাতে জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাইন্যাশিয়া গ্রামে র‌্যাবের টহল দল নাশকতা মামলার আসামিদের ধরতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।

র‍্যাব ও পুলিশ বলছে, এলাকার বিএনপি সমর্থকেরা এই হামলা ঘটনায় জড়িত। বিএনপির নেতারা বলছেন, ভুল-বোঝাবুঝিতে এ ঘটনা ঘটেছে। পরিকল্পিতভাবে মসজিদের মাইকে ডাকাত ডাকাত বলে প্রচার করলে এ হামলা হয়।

এ ঘটনায় আজ সোমবার বিকেল চারটা পর্যন্ত উখিয়া থানায় মামলা হয়নি। এ ঘটনায় কাউকে আটকও করা হয়নি।

প্রথম আলোকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাইন্যাশিয়া গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বিএনপি-জামায়াত সমর্থক। ওই এলাকার নেতা-কর্মীরা ঢাকা, কক্সবাজার ও উখিয়াতে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির সময় যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরসহ নানা নাশকতা মামলার আসামি। রোববার রাতে নাশকতা মামলার আসামিদের ধরতে র‌্যাবের একটি টহল দল পাইন্যাশিয়া গ্রামে গিয়ে অভিযান শুরু করলে ওই গ্রামের বিএনপি সমর্থক কয়েক শ মানুষ র‌্যাবকে ঘিরে ধরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। একপর্যায়ে কিছু র‌্যাবের একটি গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। এরপর ইটপাটকেল ছোড়া বন্ধ না করলে এবং আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব সদস্যরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এরপর লোকজন সরে গেলে র‌্যাব অভিযান শুরু করে।

এখনো অভিযান চলছে জানিয়ে আবু সালাম চৌধুরী বলেন, অভিযানে কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে, তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অভিযানে থাকা দল ফিরে এলে তা নিশ্চিত করা হবে। তবে র‌্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধে উখিয়ায় সড়ক অবরোধ করে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে অভিযোগে বিএনপি নেতা সোলতান মাহমুদ চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে উখিয়া থানায় ৩৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করে পুলিশ। গত ৩০ অক্টোবর উখিয়া থানায় মামলাটি করেন ওই থানার এসআই মো. আবদুল ওয়াহেদ। বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার আইনে করা ওই মামলায় আসামি করা হয় উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরীকেও।

পুলিশ জানায়, গতকাল রোববার রাত পর্যন্ত পুলিশ ওই মামলার চারজন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। সোলতান মাহমুদসহ অন্য আসামিরা আত্মগোপনে চলে গেছেন।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, নাশকতার মামলার আসামি ও উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্য আসামিদের ধরতে র‌্যাবের একটি দল রাতে পাইন্যাশিয়া গ্রামে অভিযান শুরু করে। সোলতান মাহমুদের বাড়ি পাইন্যাশিয়া গ্রামে। সোলতান মাহমুদের অনুসারী ও বিএনপির লোকজন র‌্যাবের ওপর হামলা চালায়। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে দেখে র‌্যাব সদস্যরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

পাইন্যাশিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল জলিল বলেন, রোববার রাতের ঘটনার পর রাত আনুমানিক একটার দিকে র‌্যাবের আরেকটি বিশেষ দল পাইন্যাশিয়া গ্রামে এসে সোলতান মাহমুদের বাড়ি ঘিরে তল্লাশি চালায়। কাউকে না পেয়ে ফিরে যান র‌্যাব সদস্যরা।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর বাড়ি উখিয়া উপজেলাতে। সোলতান মাহমুদ চৌধুরীও তাঁর নিকটাত্মীয়। র‌্যাবের ওপর হামলার ঘটনা ‘ভুল-বোঝাবুঝি’ দাবি করে শাহজাহান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গভীর রাতে পাইন্যাশিয়া গ্রামে র‌্যাবের অভিযান সম্পর্কে লোকজনের ধারণা ছিল না। মসজিদের মাইকে তখন প্রচার করা হয় গ্রামে ডাকাত ঢুকেছে। এটি পরিকল্পিতভাবে হয়েছে, লোকজনকে র‌্যাবের ওপর হামলা চালাতে উসকে দেওয়া হয়েছে। ডাকাত ডাকাত বলায় পাহাড়ি এলাকার পাইন্যাশিয়ার লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে র‌্যাবের ওপর হামলা চালায়। র‌্যাবও গুলি চালায়। তাতে বিএনপি সমর্থক মুজিবুল আলমসহ তিনজন আহত হয়েছেন। পরে র‌্যাবের অভিযান সম্পর্কে নিশ্চিত হলে লোকজন সরে যান।

শাহজাহান চৌধুরী র‌্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করে আসছেন। কিন্তু গাড়ি ভাঙচুরসহ নাশকতার অভিযোগে কক্সবাজার জেলায় সাতটি পৃথক মামলায় ১২২ জন বিএনপি নেতাকে আসামি করা হয়েছে। সংখ্যা উল্লেখ না করে প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়ের আসামি রাখায় আতঙ্কে শত শত বিএনপি নেতা-কর্মী এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।