ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে দলটির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে আজ বুধবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ছয় নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে জেলা বিএনপির নেতারা।
জেলা বিএনপির দাবি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক সোলায়মান ফারুকসহ ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। আটক ও গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। ঢাকায় মহাসমাবেশের আগে পুলিশের ধরপাকড় ও বাধা দেওয়ার আশঙ্কায় অনেক নেতা-কর্মী আগেই ঢাকায় ঢুকে পড়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, মহাসমাবেশ সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়েছে পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অভিযানে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রূপগঞ্জের তারাব এলাকা থেকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক সোলায়মান ফারুক ও তারাব ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি রবিউল ইসলামকে ডিবি পুলিশ বাসা থেকে আটক করে নিয়ে গেছে। এ ছাড়া আড়াইহাজার উপজেলার উচিৎপুরা ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য মো. শাহাজাহান ও মো. বাবুল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক শাহ আলম ও সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি মো. শাহজাহানকে আটক করেছে পুলিশ।
জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ রুটিন ওয়ার্ক অনুযায়ী কাজ করছে। কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। অযথা কাউকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
২৭ জুলাই ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি, থানা ও ওয়ার্ড কমিটির পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পুলিশ রাতভর নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে নেতা-কর্মীরা যেকোনো মূল্যে ঢাকার সমাবেশে অংশ নেবেন। সেই লক্ষ্যে তাঁরা যাতায়াতের জন্য বাস ভাড়াসহ সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, বিগত সমাবেশগুলোতে সরকার প্রশাসন দিয়ে তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এবারও বাস চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে, যদি তারা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়, নেতা-কর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে বিকল্প উপায়ে মহাসমাবেশে অংশ নেবেন। ১২ জুলাই ঢাকার সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য তারা বাস ভাড়ার জন্য অগ্রিম টাকা দিলেও সরকারি দল ও প্রশাসনের চাপে সেই অগ্রিম টাকা পরে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এবারও সেই আশঙ্কা আছে।
একই দিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী যোগ দেবেন। এ বিষয়ে জেলা বাস, মিনিবাস, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রওশন হোসেন বলেন, ঢাকার আওয়ামী লীগের সমাবেশে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের কিছু বাস বুকিং দিয়েছেন। তবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কেউ বাস ভাড়ার জন্য আসেননি, অগ্রিমও দেননি। তারা অন্যান্য দিনের মতো বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখবেন। প্রশাসন থেকে বাস চলাচল না করার জন্য কোনো চাপ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, সরকার সমাবেশের আগের দিন বিকেল থেকে মহাসড়কে চেকপোস্টে তল্লাশি অভিযানের নামে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও ধরপাকড় করবে। বাস চলাচল কমিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা আছে।
একই দিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে দলটির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী যাবেন বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলা থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনের করে ঢাকার সমাবেশে অংশ নেবেন।