আতর আলী কান্না করতে পারে না। বিজলি দেখে চমকায় না। গাছের ডাল ভাঙার শব্দ শোনে না। হু হু বাতাসের শব্দ আতর আলীর কানে পৌঁছায় না। আতর আলী শুধু সটান হয়ে বসে থাকে। আবু সাঈদ, রিয়া গোপের মৃত্যু তাকে স্তব্ধ করে দেয়। সন্তান হারানোর বেদনাই অনুভব করে সে।
রাষ্ট্রীয় নৃশংসতায় নিহত আবু সাঈদ, রিয়া গোপের মতো অসংখ্য শিশু-কিশোর, তরুণের মৃত্যু নিয়ে পথনাটক ‘দাহকাল’। গতকাল বুধবার বিকেল পাঁচটায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে নাটকটি পরিবেশন করেন।
নাটকের মূল চরিত্র আতর আলী গণহত্যার ঘটনায় বিমূঢ় হয়ে পড়ে। সে সারাক্ষণ ভাবে, আবু সাঈদ কি মরতে চেয়েছিলেন? রিয়া গোপেরই বা কী স্বপ্ন ছিল?
আতর আলী যখন শোকে পাথর, তখনই টেলিভিশনের খবরে বলা হচ্ছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সবকিছু স্বাভাবিক। মানুষ এখন বাসায় বসে ভাত খায়, বাজার করে, আম কেনে। মানুষ এখন হাসে। আতর আলী তাই আর বসে থাকতে পারে না। সে আবু সাঈদকে খোঁজে, রিয়া গোপকে খোঁজে। পায় না। আর সে কারণে সে বলতে চায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। সে হত্যার বিচার দাবি করে। কিন্তু রাষ্ট্র তাকে সুবিচার দেয় না। শাস্তি দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ রচিত নাটকটি লেখা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালেই। গত ৩ আগস্ট এটি পরিবেশিত হওয়ার কথা ছিল। তবে কারফিউ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে এটি আর সম্ভব হয়নি। নাটকে অভিনয় করেন ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ, ইয়াকিন হায়দার, অর্পিতা ভট্টাচার্য, আছাদ বিন রহমান, সাবিহা বিনতে জসীম, এ টি এম মাজহারুল, মো. শাহরিয়া শাকিল, জেরিন আক্তার নোশ্নি, আমরিন সুলতানা হৃদি, পার্থ সেন, মেহেদী নূর, ইনান ইলহাম, সুজান কবির।
জানতে চাইলে ঋজু লক্ষ্মী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাজে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, এর প্রতি আমরা দায় অনুভব করি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তরুয়া আর শহীদ ফরহাদের প্রতি আমরা দায় অনুভব করি। তেমন দায় থেকেই রচিত এই নাটক।’
নাটকের আগে প্রতিবাদী গান ও কবিতার আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠান শেষ হয়।