১৬ বছরে, বিশেষ করে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকারকে যারা বৈধতা দিয়েছিল, তারা সবাই ওই ফ্যাসিস্টের দোসর বলে উল্লেখ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম। জাতীয় পার্টি যদি সংসদে আওয়ামী লীগকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা না করত, তাহলে আওয়ামী লীগ ন্যূনতম যে বৈধতা পেয়েছিল, সেটা কি পেত—এমন প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
আজ শনিবার বিকেলে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সারজিস আলম এ কথা বলেন। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, ‘এই জাতীয় পার্টির বন্ধুগণ, এই সুবিধাবাদীরা, নিজেরা বিরোধীদলীয় ভূমিকায় আসে একটা গাড়ি পাওয়ার জন্য, মন্ত্রিপাড়ায় একটা বাড়ি পাওয়ার জন্য, কিছু বেতন পাওয়ার জন্য, এমপির সিটটি পাওয়ার জন্য, টেন্ডারবাজি, সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজি করার জন্য। এখন এই ভণ্ডরা ভালো সাজতেছে। দেশকে এই অবস্থায় আনার জন্য এদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সংলাপ করছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। এই নিয়ে তাঁরা ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেখানে তাঁরা জাতীয় পার্টিকে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের দোসর এবং ‘মেরুদণ্ডহীন’, ফ্যাসিস্টের দালাল’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই পোস্টের পর এই দুই সমন্বয়কের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
আজ দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমের রংপুরে আগমনের প্রতিবাদে জাতীয় পার্টি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এর আগে ১৪ অক্টোবর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও নেতা সারজিস আলমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে সারজিস আলম আজ রংপুরে এসে এ বক্তব্য দিলেন। তবে ঢাকায় অন্য কর্মসূচি থাকায় হাসনাত আবদুল্লাহ রংপুরে আসেননি।
শিগগির রংপুর বিভাগে ছাত্র-জনতার একটি মহাসমাবেশ করা হবে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পুরো প্ল্যাটফর্ম রংপুরের ভূমিকে প্রকম্পিত করে দেখিয়ে দেব, যেখানে দোসরদের ডানা-পাখনা গজানোর চেষ্টা হয়, সেগুলো আমরা রাজপথে কীভাবে গুঁড়িয়ে দিতে পারি।’
আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিমানযোগে সারজিস আলম ঢাকা থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর হয়ে রংপুরে আসেন। এরপর তিনি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলামের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়ায় যান। সেখান থেকে আবার সারজিস আলম রংপুর মহানগর পুলিশের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন।
ওই সভায় সারজিস আলম বলেন, ‘অনেক পুলিশ সদস্য অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ না করে কোনো কোনো দলের হয়ে নিজেদের উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। এক দল ক্ষমতায় এসে বাকি দলকে শোষণ করবে—এমন বাংলাদেশ আমরা চাই না।’