পরিবেশবাদীদের নানা আন্দোলনের পরও আজ ভোরে মেহগনিগাছটি কেটে মাটিতে ফেলা হয়েছে। শনিবার বিকেলে নগরের সোনাদিঘি এলাকায়
পরিবেশবাদীদের নানা আন্দোলনের পরও আজ ভোরে মেহগনিগাছটি কেটে মাটিতে ফেলা হয়েছে। শনিবার বিকেলে নগরের সোনাদিঘি এলাকায়

রাজশাহীতে ‘শোকসভা’র পরও কাটা হচ্ছে গাছ

রাজশাহীতে গাছ কেটে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রক্রিয়া বন্ধে গতকাল শুক্রবার ‘শোকসভা’ করেছিলেন পরিবেশবাদীরা। এরপরও গাছ কাটা বন্ধ হয়নি। আজ শনিবার ভোরে একটি শতবর্ষী মেহগনিগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কাটার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল পাকা জাম ধরে থাকা আরেকটি গাছ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানতে পেরে সকাল ছয়টার দিকে গিয়ে বাধা দিলে শ্রমিকেরা পালিয়ে যান।

স্থানীয় চায়ের দোকানদার আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, মেহগনিগাছটি গতকাল (শুক্রবার) রাতেও দাঁড়িয়ে ছিল। আজ ভোরে গাছ কাটার খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে যান। পরে গাছ কাটা রেখে পালিয়ে যান শ্রমিকেরা।

খবর পেয়ে দুপুরে নির্মাণাধীন শহীদ মিনারে যান রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মো. নাজমুল হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত ১২টার দিকে তিনি শেষবারের মতো ঘুরে গেছেন। তখন মেহগনিগাছটি দাঁড়িয়ে ছিল। গত বৃহস্পতিবার গাছটির ডালপালা কাটা হয়েছিল। তাঁরা প্রতিবাদ করে বন্ধ করেছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, গাছটি আর কাটা হবে না। বর্ষায় আবার ডালপালা দিয়ে পাতা গজাবে। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।

নাজমুল হোসেন বলেন, ‘সবুজ কেটে টাইলস লাগানো হচ্ছে। শতবর্ষী এই গাছগুলো মাত্র ১ লাখ ৭১ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। এই টাকা আমরাই দিতাম জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে। তারা টাকার জন্যই গাছ কেটেছে। শহীদ মিনারটিকে তারা বিতর্কিত করে ফেলল। অথচ সবুজে মোড়ানো পরিবেশে শহীদ মিনারটি করা যেত। এখন বাকি গাছগুলো রক্ষায় আমরা লড়ে যাব।’

গাছ কেটে শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে বেশ কয়েক দিন ধরে প্রতিবাদ করে আসছিল রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদ। ২২ মে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা শহীদ মিনার নির্মাণের নির্ধারিত স্থানে সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেন। এরপর ২৫ মে তাঁরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গাছ না কাটার দাবিতে স্মারকলিপি দেন। সংগঠনের সদস্যদের দাবি, সেদিন চেয়ারম্যান গাছ রেখেই নকশা বদলে শহীদ মিনার নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন।

৬ জুন পরিবেশ সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া এক পত্রে রাজশাহীতে শতবর্ষী গাছ না কেটে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। ওই পত্রে সই করেছিলেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল, ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশী কবির, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নগর-পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, নদী ও পরিবেশ গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, রাজশাহীর পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মাহবুব টুংকু প্রমুখ।

শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য কাটা হচ্ছে শতবর্ষী গাছ। জামগাছটি কাটতে মাটি খোঁড়া হয়েছে। শনিবার বিকেলে নগরের সোনাদিঘি এলাকায়

এরপরও ওই দিন (৬ জুন) পাঁচটি বড় বড় গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করে জেলা পরিষদ। দরপত্রে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকায় গাছগুলো কিনে নেয় ‘মেসার্স মেঘনা এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাঁরা শ্রমিকদের নিয়ে গাছ কাটা শুরু করেন। খবর পেয়ে দুপুরে পরিবেশবাদীরা গিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে দেন। সেদিন পাঁচটি গাছের মধ্যে তিনটি কেটে ফেলা হয়। অন্য দুটির মধ্যে একটি মেহগনিগাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলার পর শিকড় কাটা শুরু হয়েছিল। গাছটি সেদিন দাঁড়িয়ে ছিল। পাকা জাম ধরে থাকা আরেকটি গাছ কাটতে গোড়া থেকে মাটি সরানো হচ্ছিল। পরিবেশবাদীদের বাধায় গাছ দুটি প্রাণে বেঁচেছিল সেদিন। এর প্রতিবাদে গতকাল শোকসভা করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর আজ মেহগনিগাছটি কেটে মাটিতে ফেলা হয়। জামগাছের গোড়া আরও খোঁড়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।