রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে কক্ষে আটকিয়ে মারধরের পর চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলে এ ঘটনা ঘটে।
মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গতকাল রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মারধরের শিকার সামছুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। আর অভিযুক্ত ভাস্কর সাহা শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি মতিহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদের অনুসারী হিসেবে তিনি ক্যাম্পাসে পরিচিত।
ভুক্তভোগী সামছুল ইসলাম লিখিত অভিযোগে জানান, তিনি মতিহার হলের ১৫৯ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন তিনি। সেখান থেকে তিনি বাড়িতেও টাকা পাঠান। রাজশাহীতে এক ছোট ভাইকেও কলেজে পড়াশোনার খরচ দেন। তাঁর কাছে গত কয়েক দিন ধরেই ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। প্রথমে চাঁদা দাবি করে ১৫ আগস্ট। এর পর থেকে চাঁদা চেয়ে বারবার ফোন দিতে থাকেন। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। টাকা না দিলে হল থেকেও নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় তাঁকে। সর্বশেষ গতকাল বেলা ৩টার দিকে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা তাঁকে ফোন করে হলের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে ডেকে নেন। সেখানে ভাস্করের সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন।
লিখিত অভিযোগে সামছুল আরও বলেন, ভাস্করের কক্ষে যাওয়ার পর তিনি তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করেন। একপর্যায়ে গলায় ছুরি ধরে মানিব্যাগে থাকা ২০ হাজার টাকা কেড়ে নেন। সে সময় আরও ৬ হাজার টাকা দাবি করলে, বিষয়টি সামছুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের অবহিত করবেন বলে তাঁদের জানান। এ কথা শুনে ভাস্করসহ বাকি দুজন রড ও স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন শামছুলকে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের ভাস্কর তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেন ‘কাউকে বললে আবরারের যে অবস্থা হয়েছে, সে অবস্থা হবে।’
ভাস্করসহ বাকি দুজন রড ও স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন শামছুলকে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের ভাস্কর তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেন ‘কাউকে বললে আবরারের যে অবস্থা হয়েছে, সে অবস্থা হবে।’
মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সামছুলের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি কাউকে মারধর করেননি। এমনকি কক্ষেও নেননি। কারও ইন্ধনে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। এটি প্রমাণিত হলে ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে জানতে পেরেছেন। প্রক্টর দপ্তরে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে হলে ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক বলেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তাঁরা গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রক্টরের দপ্তরে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং তড়িৎ ও বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের এ কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী প্রক্টর ও ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল মামুন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জহুরুল আনিস।
রাত পৌনে ১২টার দিকে প্রক্টর আসাবুল হক প্রক্টর দপ্তর থেকে বেরিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীর অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রাধ্যক্ষের জিম্মায় হলে পাঠানো হয়েছে। তাঁর হলের নিরাপত্তা হল প্রশাসন দেবে।