পদ্মা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি শরীয়তপুরের নড়িয়ার কেদারপুর এলাকায়
পদ্মা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি শরীয়তপুরের নড়িয়ার কেদারপুর এলাকায়

শরীয়তপুরের নড়িয়া

বিএনপি নেতার নেতৃত্বে বালু উত্তোলন, ঝুঁকিতে বাঁধ

বাঁধের কাছ থেকে প্রতি রাতে ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ ঘনফুট বালু তোলা হচ্ছে। বালু তোলার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি নেতা আজাহার শিকারি।

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছে একটি চক্র। অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলায় পদ্মা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে আছে। জরিমানা ও কারাদণ্ড দিয়েও ওই এলাকায় বালু তোলা বন্ধ করা যাচ্ছে না। বালু তোলা অব্যাহত থাকায় ওই এলাকায় নদীভাঙন শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। উপজেলা বিএনপির নেতা আজাহার শিকারির নেতৃত্বে বালু তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শরীয়তপুর পাউবো সূত্র জানায়, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর, কেদারপুর, ঘরিসার ইউনিয়ন ও নড়িয়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক নদীভাঙন ছিল। এতে ওই সময়ে নড়িয়ার অন্তত ২০ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাজিরার সফি কাজীর মোড় থেকে নড়িয়ার সুরেশ্বর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া পদ্মা নদীর দক্ষিণ তীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে ১২ কিলোমিটার নদীর চর খনন করা হয়।

ওই বাঁধের মুলফৎগঞ্জ, চরজুজিরা, কেদারপুর ও সুরেশ্বর এলাকায় একটি চক্র কয়েক বছর ধরে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে বিক্রি করছে। প্রতিদিন ১০টি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হয়। সন্ধ্যার পর বালু উত্তোলন শুরু করে চক্রটি। ভোররাত পর্যন্ত বালু উত্তোলন চলে। প্রতি রাতে ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ ঘনফুট বালু তোলা হয়। এরপর এই বালু বাল্কহেডে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।

বালুক্রেতা, বালু তোলার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বালু তোলার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আজাহার শিকারি, নুরুজ্জামাল শেখ, দিনু খান,তারা মিয়া, রাজীব মুন্সি, সুমন খান। এই চক্রের সদস্যরা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেপ্টেম্বর থেকে বালু তুলছে।

অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আজাহার শিকারি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনে আমাদের অনেক জমি বিলীন হয়েছে। সেই সব জমি নদীর উত্তর প্রান্তে চর জেগেছে। আমরা ওই চর থেকে কিছু বালু তুলি। প্রশাসনের অনেকে তা জানেন। সব কটি ড্রেজারের আমার নেতৃত্বে চলছে। বালু তোলার কারণে তীর রক্ষা বাঁধের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।’

নড়িয়ার কেদারপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত ড্রেজার

নড়িয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধে গত নভেম্বরে ৮ দিন অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তখন ভ্রম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৮ ব্যক্তিকে ৪ মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং ১৭ ব্যক্তিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একটি খননযন্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এরপর ২-৩ দিন বন্ধ থাকলেও আবার বালু তোলা শুরু হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বালু তোলার কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত বালু তোলা হয়। একেকটি বাল্কহেডে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার ঘনফুট বালু বোঝাই করা হয়। একেকটি ড্রেজার দিয়ে প্রতি রাতে ২ লাখ থেকে ৩ লাখ ঘনফুট বালু তোলা হয়। প্রতি ঘনফুট বালু ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়। রাতে বালু উত্তোলনের পর দিনের বেলা ড্রেজারগুলো নদীর তীরে রাখা হয়।