ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই শিশুসন্তানসহ এক মায়ের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পর থেকে মারা যাওয়া গৃহবধূর স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছেন। স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁদের বিষ খাইয়ে হত্যা করেছেন বলে ওই গৃহবধূর বাবার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
মারা যাওয়া তিনজন হলেন সদর উপজেলার ঘাটুরা সরকার বাড়ি এলাকার আশরাফ আলী সরকারের স্ত্রী শারমিন আক্তার (২৪) এবং তাঁর দুই মেয়ে রোজা আক্তার (৬) ও নোহা আক্তার (৩)।
শারমিনের বাবার বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া, যৌতুকের জন্য নির্যাতনসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করায় দুই মেয়েসহ শারমিনকে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিষ খাইয়ে হত্যা করেছেন। পরে তাঁরা লাশ হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যান।
শারমিন জেলার বিজয়নর উপজেলার ইসলামপুরের শশই এলাকার বাসিন্দা কদু মিয়ার মেয়ে। আশরাফ বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে নিরাপত্তা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
শারমিনের বাবার বাড়ির লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আট বছর আগে শারমিনের সঙ্গে আশরাফের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর আশরাফ অপর এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। পাশাপাশি আশরাফ জুয়া খেলতেন ও মাদকাসক্ত ছিলেন। এসব নিয়ে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে কলহ দেখা দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে বাবার বাড়ির লোকজন শারমিনকে বিজয়নগরে নিয়ে ছয় মাস রাখেন। পরে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের লোকজন সালিস বৈঠকে বসেন। আশরাফ স্ত্রীর ভরণপোষণ দেবেন, খোঁজখবর রাখবেন এবং ভালোভাবে সংসার চালাবেন বলে সালিস বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু বাড়ি ফিরে আশরাফ ওই নারীর সঙ্গে পরকীয়া চালিয়ে যেতে থাকেন। একপর্যায়ে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে দিতে শারমিনের ওপর চাপপ্রয়োগসহ মারধর করেন আশরাফ। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও কলহ হতো। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে স্ত্রী শারমিনকে গুরুতর অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান আশরাফ। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আধা ঘণ্টা পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শারমিন মারা যান। এরপর আশরাফের স্বজনেরা তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। কিন্তু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক দুই শিশুসন্তানকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর স্বামী আশরাফসহ তাঁর পরিবারের লোকজন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান।
বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে শারমিন ও তাঁর দুই শিশুসন্তানের লাশ শারমিনের বাবার বাড়ির লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শারমিনের বাবা কদু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার দুই নাতনিসহ মেয়ের বাড়িতে আসার কথা ছিল। তারা আসল ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে। আশরাফ, তার তিন ভাই মাসুদ আলী সরকার, মোহাম্মদ আলী সরকার ও মিশন সরকার সবাই মিলে আমার দুই নাতনিকে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তানভির আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, শারমিনের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্বামীসহ সবাই পলাতক। মারা যাওয়া দুই শিশুর শরীরের কোথাও আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। শারমিনের স্বামীকে আটক করার চেষ্টা চলছে।