সুখবর

গান দিয়ে শুরু হয় কলেজের পাঠদান

বিনোদনের মাধ্যমে পাঠদান শুরুর লক্ষ্যে কলেজের অধ্যক্ষ মো. নুরুল বাসেত এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

নেত্রকোনা সরকারি কলেজ
নেত্রকোনা সরকারি কলেজ

আকাশে তখন মেঘের লুকোচুরি খেলা চলছে। সকাল ৮টা বেজে ৫৫ মিনিট। এর মধ্যে নেত্রকোনা সরকারি কলেজের মাইকে বেজে উঠল দেশাত্মবোধক গান, ‘ও আমার দেশের মাটি...।’ ক্যাম্পাসের ভেতর থাকা শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের সঙ্গে গুনগুন করে ওই গান গাইছেন। কেউ আবার নীরবে গান উপভোগ করছেন।

৯টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো জাতীয় সংগীত। কলেজ ক্যাম্পাসে থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাঁড়িয়ে সমবেত স্বরে গাইলেন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি..।’ গান শেষে ঘণ্টা বেজে উঠল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যান। তিন বছর ধরে এভাবেই গানে গানে নেত্রকোনা সরকারি কলেজে প্রতিদিনের পাঠদান শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে ও বিনোদনের মাধ্যমে পাঠদান শুরুর লক্ষ্যে কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো. নুরুল বাসেত এ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদ বলেন, তিনি কলেজে নিয়মিত ক্লাস করেন। প্রতিদিনই সকাল সাড়ে আটটা থেকে কলেজজুড়ে বাজতে থাকে দেশাত্মবোধক, রবীন্দ্রসংগীত কিংবা নজরুলের গান। সকালে এ ধরনের গান শুনে মন ভরে ওঠে। সারা দিন আনন্দে কাটে।

ফয়েজের সঙ্গে তাঁর তিন সহপাঠী রবিউল হাসান, মারিয়া আক্তার এবং পাপরিন আক্তারও সায় দিলেন। মারিয়া আক্তার বলেন, নতুন অধ্যক্ষ স্যার আসার পর থেকে কলেজে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। কলেজ ক্যাম্পাস এখন অনেক পরিচ্ছন্ন। চারদিকে ফুল–ফলের গাছ। ক্যাম্পাসের ভেতরের সব রাস্তায় টাইলস বিছানো। অন্যান্য সরকারি কলেজের তুলনায় এখানে বেতনও কম লাগে। রাজনৈতিক কোনো বিরোধও নেই।

দ্বাদশ শ্রেণির শারীরিক প্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থী বললেন, তাঁর ভর্তির সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ শুধু ভর্তির টাকা নিয়েছিল। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছে। পরিবারে আর্থিক অসচ্ছলতা থাকায় কলেজের এ সিদ্ধান্তে তাঁর অনেক উপকার হয়েছে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, শহরের সাতপাই এলাকার ৭৩ বছরের পুরোনো এ কলেজে উচ্চমাধ্যমিক ছাড়া ১৪টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও ১৩টি বিষয়ে স্নাতকোত্তরেও পড়ানো হয়। কলেজে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। শিক্ষক রয়েছেন ৬৮ জন।

নেত্রকোনা ছাড়া সুনামঞ্জের ধর্মপাশা, মধ্যনগর, ময়মনসিংহের গৌরীপুর, ধোবাউড়া ও কিশোরগঞ্জের কয়েকটি উপজেলার শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করেন। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, সুশৃঙ্খল পরিবেশ এবং নিয়মিত ক্লাস হওয়ায় কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ভালো। এবার উচ্চমাধ্যমিকে পাসের হার ৯৭ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৩১২ জন।

নুরুল বাসেত ২০১৯ সালের ১১ জুন অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। এরপর থেকেই কলেজে নিয়মিত গান বাজিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষসংকটের সমাধান, নিয়মিত ক্লাস, সমৃদ্ধ পাঠাগার, মা ও শিশুদের বিশ্রামকক্ষ, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষরোপণ, সিসি ক্যামেরা চালু, ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ নেন তিনি। কলেজের সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে কলেজের বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে এখন শোভা পাচ্ছে সাত বীরশ্রেষ্ঠ, শহীদ বুদ্ধিজীবী, ১৫ আগস্টে জাতির জনক, তাঁর নিহত স্বজনদের ছবিসহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। প্রশাসনিক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভাস্কর অখিল পালের নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য ‘চেতনায় বঙ্গবন্ধু’। শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং ওই কলেজের দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আরজ আলীর নামে তৈরি পাঠাগারের কলেবরও বৃদ্ধি করা হয়েছে।

কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান জিয়াউল কবীর বলেন, ইতিবাচক এসব পরিবর্তনের জন্য তিনি অধ্যক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

অধ্যক্ষ নুরুল বাসেত বলেন, ‘এই কৃতিত্ব আমার একার নয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কলেজ এই পর্যায়ে এসেছে।’