আবুল খায়ের আবদুল্লাহ কাল বরিশালে ফিরবেন, বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি

আবুল খায়ের আবদুল্লাহ
ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে বরিশালে ফিরছেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। এ জন্য প্রায় ১০ হাজার নেতা-কর্মী–সমর্থক তাঁকে বরণ করার প্রস্ততি নিচ্ছেন। নগরের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হচ্ছে তোরণ, লাগানো হচ্ছে ব্যানার ও ফেস্টুন।

তবে নগর আওয়ামী লীগের কোনো প্রস্তুতি বা তৎপরতা নেই। তাঁকে বরণের জন্য বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থক ও সাদিক আবদুল্লাহ বিরোধী ১০ কাউন্সিলর এবং দলীয় নেতা-কর্মীরাই এসব প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আবুল খায়েরের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, আবুল খায়ের আবদুল্লাহ আগামীকাল সকালে ঢাকা থেকে সড়কপথে বরিশালের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। সঙ্গে থাকবেন বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও তাঁর সঙ্গে বরিশালে আসতে পারেন।

আবুল খায়ের আবদুল্লাহ আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামীকাল সকালে বরিশালে যাব। এরপর আমার প্রিয় বরিশাল নগরবাসীর সঙ্গে দেখা করে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা বিনিময় করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বরিশাল নগর দীর্ঘদিন দুর্ভোগের নগরী ছিল। আমার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে এই দুর্ভোগ লাঘবের। মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেই চেষ্টাও থাকবে আমার। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা মনপ্রাণ দিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করব।’

বড় ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সঙ্গে আজ সকালে তাঁর ঢাকার বাসায় সাক্ষাৎ হওয়ার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি বড় ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তবে সেখানে রাজনৈতিক কোনো আলাপ হয়নি। সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তাঁর দোয়া নিয়েছি।’

আবুল খায়ের আবদুল্লাহর বরিশালে আগমন উপলক্ষে তাঁর সমর্থকেরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিলেও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো প্রস্তুতি ও তৎপরতা নেই। কেন নেই জানতে আজ বেলা তিনটার দিকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (খায়ের আবদুল্লাহ) আসবেন, এটা আমাদের জানানো হয়নি। লোকমুখে শুনছি তিনি কাল আসবেন। তবে দেখি, এখনো তো সময় আছে, জানাতেও পারে।’

আবুল খায়ের আবদুল্লাহর ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, আগামীকাল সকালে সড়কপথে ঢাকা থেকে রওয়ানা করবেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। বেলা ১১টায় নগরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের গড়িয়ার পাড় এলাকায় পৌঁছাবেন তিনি। সেখান থেকে সুসজ্জিত গাড়িবহর নিয়ে মিছিল সহকারে বরিশালের নেতা-কর্মীরা তাঁকে বরণ করবেন।

নগরের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বলেন, অন্তত ১০ হাজার নেতা-কর্মী–সমর্থক তাঁকে বরণ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। তৈরি হচ্ছে তোরণ, লাগানো হচ্ছে ব্যানার-ফেস্টুন। নথুল্লাবাদ দিয়ে নগরে প্রবেশ করে গাড়িবহর বিএম কলেজ, নতুন বাজার, জেলখানার মোড় হয়ে সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হল হয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে থামবে। এরপর দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে। নগরবাসী ও নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন আবুল খায়ের। এ সময় প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা নির্বাচন নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।

১৫ এপ্রিল দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড। এতে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি এখনো বরিশালে ফেরেননি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তিনি বর্ষীয়ান নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই এবং বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা। সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিতে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব পাঠালেও তা অগ্রাহ্য হয়। ফলে সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থকেরা হতাশ।

নগর আওয়ামী লীগ আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে বরণে কোনো প্রস্তুতি না থাকাকে কীভাবে নিচ্ছে, এমন প্রশ্ন করা হলে বরিশাল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, এটা একান্তই তাদের বিষয়। এখানে বলার কী আছে। সবাই তো সবকিছু জানে। এটা আন্তরিকতার ব্যাপার। আবুল খায়ের আবদুল্লাহ জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী। দল তাঁর পক্ষে কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। এতে বলা না বলার কী আছে। আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মনোনয়ন পাওয়ার পর বরিশালে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। শান্তিপ্রিয় মানুষের মধ্যে একধরনের জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর পক্ষে যে জনমতের জোয়ার, তাতে ভোটাররাই তাঁর কর্মী হিসেবে কাজ করবেন।

বরিশালে প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এখন আর দলে পদ-পদবি নেই। তাঁরা ছিটকে পড়েছেন। অথচ নির্বাচনী মাঠে তাঁরাই দলের পক্ষে সবচেয়ে বড় শক্তি। সেই পদবঞ্চিত, নিগৃহীত বিশাল অংশটি আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে মাঠে নেমে গেছে।