বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান।
গতকাল সোমবার রাতে রংপুর নগরের সেন্ট্রাল রোডে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এক সভায় মোস্তাফিজার রহমান এ ঘোষণা দেন। জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির এই যৌথ সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রধান অতিথি ছিলেন।
সভায় মোস্তাফিজার রহমান বলেন, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর কোনো প্রোগ্রাম রংপুরের মাটিতে হতে দেওয়া হবে না। এ সময় দলের নেতা–কর্মীরাও স্লোগান দিয়ে তাঁকে সমর্থন জানান।
দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে রাজনৈতিক সংলাপে না ডাকতে ফেসবুকে হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম যে ঘোষণা দিয়েছেন। এ জন্য তাঁরা রংপুরে আসতে পারবেন না। যাঁর যা কিছু আছে, তা–ই নিয়ে এই রংপুরের পার্টি অফিসে বসে থাকবেন। আমরা দেখিয়ে দিতে চাই, রংপুরে জাতীয় পার্টির শক্তি কতটুকু। যদি এই আন্দোলনকে আমরা জনস্রোত করতে না পারি, তাহলে জাতীয় পার্টি থেকে নাকে খত দিয়ে চলে যাবে।’
জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনারের উদ্দেশে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে কোনো আলোচনা নয়। আপনাদেরকে জানিয়ে দিতে চাই, রংপুরে কোনো রাজনৈতিক সংলাপে যদি জাতীয় পার্টিকে ডাকা না হয়, সম্মান দেওয়া না হয়, তাহলে জাতীয় পার্টি নিজেই অধিকার আদায় করে নেবে। এর জন্য আপনারা প্রস্তুত থাকবেন।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সংলাপ করছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। এ বিষয়ে গত সপ্তাহে তাঁরা দুজন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তাঁরা জাতীয় পার্টিকে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের দোসর ও মেরুদণ্ডহীন ফ্যাসিস্টের দালাল হিসেবে উল্লেখ করেন। দলটিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিবাদ ও বিরোধিতা করেন তাঁরা।
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ মিছিল
এদিকে সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার প্রতিবাদে গতকাল রাতেই রংপুর নগরে বিক্ষোভ মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এ সময় অবিলম্বে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমা প্রার্থনা ও বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
গতকাল রাত তিনটার দিকে নগরের মেডিকেল মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তাঁরা মিছিল থেকে বিভিন্ন স্লোগান দেন। মিছিলটি নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মেডিকেল মোড়ে সমাবেশ করে। এ সময় বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুরের প্রতিনিধি ইমরান আহমেদ, মোতাওয়াক্কীল বিল্লাহ শাহ্ ফকির, ইমতিয়াজ আহমেদ প্রমুখ। ইমরান আহমেদ বলেন, ছাত্র-জনতার মুক্তির লড়াই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান। সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহরা চব্বিশ বিপ্লবের নায়ক। তাঁদের অবাঞ্ছিত করার এখতিয়ার জাতীয় পার্টির নেই। এ জন্য তাদের ক্ষমা চাইতে হবে।