সিলেটে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলার ২৮ দিন পর বিএনপির আনুষ্ঠানিক দুঃখ প্রকাশ

সিলেটের কিনব্রিজ এলাকার সারদা স্মৃতি হলে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। হামলার পর সেখানে জড়ো হন সাংস্কৃতিক কর্মীরা। গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের সারদা হলে মহড়ারত সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলার ২৮ দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জেলা বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে সিলেটের সারদা হলে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটে। সংস্কৃতিকর্মীদের অভিযোগ, ওই দিন বিএনপির রোডমার্চ ও সমাবেশে যোগ দিতে আসা কয়েক নেতা-কর্মী সারদা হলে ঢুকে নারী সংস্কৃতিকর্মীসহ উপস্থিত নাট্যকর্মীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এতে বাধা দিলে কয়েক নেতা-কর্মী দলবদ্ধ হয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলা চালান। এতে অন্তত ১০ সংস্কৃতিকর্মী আহত হন।

এ ঘটনায় পরদিন সন্ধ্যায় সিলেটের সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত মহানগরের কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার পর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় নগরে মৌন মিছিল ও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছেন সিলেটের সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীরা। এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের মো. হারুন মিয়া নামের পদধারী এক নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে ২৯ সেপ্টেম্বর একই মামলায় দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ আহমদ গ্রেপ্তার হন।

সংস্কৃতিকর্মী ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর এ পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা তিন দফা সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ সময় তাঁরা দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও বিএনপি নেতারা দেন। এ বৈঠকের অংশ হিসেবেই গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা ও মহানগর বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে সারদা হল প্রাঙ্গণে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মীর সঙ্গে সিলেটের নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীদের ঘটনাটিকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে মন্তব্য করে দুঃখ প্রকাশ করা হয়।

বিবৃতিতে স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের চার নেতা বলেন, ‘এমন ঘটনায় আমরা দুঃখিত ও মর্মাহত। এ ঘটনায় যাঁরা সংক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমরা সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাই। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জড়িত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঘটনার ২৮ দিন পর বিবৃতি দেওয়া প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি কখনোই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না, এটা গণমানুষের দল। হামলার ঘটনার পরপরই বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ ঘটনায় আমরা নিন্দা জানিয়েছি। পরে এ নিয়ে তিন দফা সিলেটের সংস্কৃতি ও নাট্যকর্মীদের সঙ্গে আমাদের বৈঠকও হয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দিয়ে বিএনপি দুঃখ প্রকাশ করেছে। হামলার ঘটনায় যাঁদের সম্পৃক্ততা তদন্ত প্রতিবেদনে আসবে, তাঁদের বিরুদ্ধেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগির এ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে জমা দেওয়া হবে।’