জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের একটি কক্ষে ক্লাস করেন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা; সেটিও আবার কক্ষটি খালি থাকা সাপেক্ষে
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের একটি কক্ষে ক্লাস করেন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা; সেটিও আবার কক্ষটি খালি থাকা সাপেক্ষে

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, এর মধ্যেই শুরু ইতিহাস বিভাগের ক্লাস

ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়ে গেলেও বিভাগে এখনো কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে অন্য বিভাগ থেকে ‘ধার করা’ শিক্ষকেরা এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন।

এ ছাড়া এই বিভাগের জন্য কোনো অবকাঠামোও বরাদ্দ দেয়নি প্রশাসন। ফলে দর্শন বিভাগের একটি কক্ষে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা; সেটিও আবার কক্ষটি খালি থাকা সাপেক্ষে।

সদ্য ক্যাম্পাসে আসা শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। বিভাগে শিক্ষক না থাকায় তাঁরা অনেকটাই অভিভাবকহীন। নিজেদের কোনো কক্ষ না থাকায় অনেকটাই ঠিকানাহীন।

শিক্ষক ছাড়া একটি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়া অনিয়ম বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বিশেষায়িত শিক্ষার জন্য। কিন্তু যদি বিশেষায়িত শিক্ষক ছাড়া কুড়িয়ে আনা শিক্ষক দিয়ে কার্যক্রম চালানো হয়, তাহলে বিভাগ খোলার উদ্দেশ্য সফল হয় না। শিক্ষক ছাড়াই পাঠদান কার্যক্রম চালু করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপযুক্ত আচরণ নয়। শিক্ষক নিয়োগের আগেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালু হওয়া ঘোড়ার আগে গাড়ি বাঁধার মতো অবস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগ চালুর অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একই দিন বিভাগে জনবলকাঠামোর নিয়োগেরও অনুমোদন দেওয়া হয়। চারজন শিক্ষক ও দুজন কর্মচারী নিয়োগের জন্য প্রথম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের ৪ এপ্রিল। ১৫ মে আবেদনের শেষ সময় ছিল। কিন্তু নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেননি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর। সরকার পতন হলে সৌমিত্র শেখর আত্মগোপনে থেকে পদত্যাগ করেন। বিতর্ক এড়াতে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২৩ অক্টোবর পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। শুধু ইতিহাস বিভাগের চারজন শিক্ষক, দুজন কর্মচারী নয়, বিভিন্ন বিভাগ মিলে ৩৩ জন্য শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১৭ নভেম্বর ছিল আবেদন জমার শেষ দিন।

এদিকে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ না হলেও ৪ নভেম্বর থেকে ইতিহাস বিভাগের পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, দর্শন বিভাগের একটি কক্ষে ক্লাস করছেন ইতিহাস বিভাগের ৩০ জন শিক্ষার্থী। কক্ষটির দরজার সামনে কাগজে লেখা ‘ক্লাস রুম, ইতিহাস বিভাগ’। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. হাবিবুল উল মাওলা, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ সহকারী অধ্যাপক এ কে এম মাসুদুল মান্নান এবং বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রমজান আলী আকন্দকে বিভাগটির ৩০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে আছেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জুনাঈদ হোসেন বলেন, ‘আলাদা বিভাগ ও শিক্ষক না থাকায় আমরা অন্য বিভাগে ক্লাস করি। রুম খালি থাকলে ক্লাস করতে হয়। শিক্ষকদের নিজস্ব বিভাগে ক্লাস থাকলে সমস্যা হয়। ইতিমধ্যে আমাদের নজরুল স্টাডিজ, ইংলিশ স্কিল, ইন্ট্রোডাকশন অব হিস্ট্রি ও হিস্ট্রি অব বেঙ্গল—এই চারটি কোর্স চালু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষকের পাশাপাশি বাইরের একজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। আমরা যেন সেশনজটে না পড়ি, সে কারণে উপাচার্য জানিয়েছেন, দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেবেন। শিক্ষক না থাকায় আমরা খেলাধুলায়ও অংশগ্রহণ করতে পারছি না।’

এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন নয়, এর আগে মার্কেটিং বিভাগ, এইচআরএম, ব্যবস্থাপনা, পরিসংখ্যান ও দর্শন বিভাগেও একই ঘটনা ঘটে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জনবল নিয়োগ সম্পন্ন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা ভালো। তবে জনবল নিয়োগ সম্পন্ন না করে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমেরও সুযোগ আছে। অতীতে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিভাগে এভাবে ক্লাস বা শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার ঘটনা রয়েছে। বর্তমান প্রশাসন ইতিমধ্যেই শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আশা করি, ওই বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে।’

শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ সম্পন্ন না করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা উচিত নয় জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ না দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করায় আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি। শিক্ষার্থীদের পাঠ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ইতিহাসের শিক্ষার্থী কম থাকায় দর্শন বিভাগের একটি কক্ষে সাময়িকভাবে ক্লাস শুরু করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব পরবর্তী সময়ে কোনো বিভাগ চালু করলে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া আগে সম্পন্ন করতে।’