শরীয়তপুরে তাপমাত্রা তখন ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হাট-বাজার, সড়ক, মাঠ ও কর্মস্থলে কর্মব্যস্ত মানুষ ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কয়েক কিশোর ক্লান্ত পথচারীদের একটু স্বস্তি দিতে শরবত পান করায়। গতকাল শনিবার দুপুরে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর বাজারে আট বন্ধু মিলে এ কাজ করে। এদিন ৫০০ মানুষের মধ্যে ১২০ লিটার শরবত বিতরণ করা হয়।
ভোজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহীদুল সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ভোজেশ্বর বাজারটি অনেক বড়। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মানুষ কোনো না কোনো সময় বাজারে থাকেন। অনেকে দূরদূরান্ত থেকে প্রখর রোদ্দুরে হেঁটে আসেন। ক্লান্ত মানুষকে স্বস্তি দিতে কিশোর-তরুণদের শরবত পান করানোর মতো এমন উদ্যোগে তাঁরা গর্বিত। তাদের যেকোনো প্রয়োজনে তিনি পাশে থাকবেন।
ওই আট বন্ধু হলো নড়িয়ার ভোজেশ্বর, জপসা, লোনসিং ও ফতেজঙ্গপুর এলাকার আলমাস বয়াতি, নাহিদ সরদার, কামরুল, শাহরিয়ার হাসান, রাসিন, সিয়াম সিকদার, মুন্না সরদার ও রোহান। তারা বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ফলাফলপ্রত্যাশী এসব শিক্ষার্থী এখন অবসর সময় পার করছে।
আলমাস বয়াতি প্রথম আলোকে বলে, ‘আমরা সবাই শিক্ষার্থী। পরীক্ষা শেষে বাড়িতেই সময় কাটাচ্ছিলাম। এই প্রচণ্ড গরমে মানুষ বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। দুপুরের রোদ্দুরে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। তৃষ্ণার্ত মানুষ ক্লান্ত হয়ে যাতে অসুস্থ না হয়, সে জন্য আমরা বন্ধুরা শরবত সরবরাহ করছি। প্রথম দিনে ৫০০ মানুষকে শরবত পান করতে দেওয়া হয়েছে। যত দিন দাবদাহ থাকবে, তত দিন আমরা এ কাজ চালিয়ে যেতে চাই। এ কাজের যত ব্যয় হবে, আমরা বন্ধুরাই তা নির্বাহ করব।’
এলাকার ছেলেরা দাবদাহের মধ্যে ক্লান্ত পথিকদের স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা অনন্য উদ্যোগ।মানিক হাওলাদার, ব্যবসায়ী, ভোজেশ্বর বাজার
নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর বাজারটি প্রাচীন একটি বাজার। সপ্তাহে দুই দিন হাট ও প্রতিদিন বাজারে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ক্রেতা-বিক্রেতারা কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে বাজারটিতে আসেন। বাজারে আসা লোকজন ও পথচারীদের গতকাল দুপুরে লেবু, চিনি, পানীয় জাতীয় পাউডার ও বরফ দিয়ে শরবত বানিয়ে পান করতে দিতে দেখা যায়।
নড়িয়ার লোনসিং থেকে রিকশার করে যাত্রী নিয়ে ভোজেশ্বর আসেন মহসিন সরদার। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাজারে এলে এক কিশোর তাঁকে থামিয়ে এক গ্লাস শরবত পান করতে দেয়। রিকশায় থাকা যাত্রীদেরও শরবত পান করতে দেওয়া হয়। রিকশাচালক মহসিন সরদার প্রথম আলোকে বলেন, প্রচণ্ড গরমে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং খুব তৃষ্ণার্ত ছিলেন। এমন সময় ঠান্ডা শরবত পান করতে পারবেন, ভাবতেই পারেননি।
ভোজেশ্বর বাজারের ব্যবসায়ী মানিক হাওলাদার বলেন, এলাকার ছেলেরা দাবদাহের মধ্যে ক্লান্ত পথিকদের স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা অনন্য উদ্যোগ।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য প্রথম আলোকে বলেন, এই দাবদাহে কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ কষ্টে আছেন। দুপুরের সময় রাস্তা-ঘাটে মানুষ ক্লান্ত থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে ক্লান্ত মানুষকে স্বস্তি দিতে মানবিক উদ্যোগ নিয়েছে ভোজেশ্বরের কয়েকজন কিশোর-তরুণ। উপজেলা প্রশাসন তাদের এই উদ্যোগের পাশে থাকবে।