বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কুমিল্লা নগরের ঐতিহ্যবাহী রাজগঞ্জ বাজারে প্রতিবছরের মতো এবারও কাতলা মাছের মেলা বসে। মেলায় নানা আকারের কাতলা মাছ তোলা হয়। এবার অন্যান্যবারের তুলনায় মাছের জোগান কম। তবে দাম বেশি, ক্রেতাও বেশি। রাজগঞ্জ বাজার পেরিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরোনো মহাসড়কের দুই ধারে শুধু মাছ আর মাছ দেখা গেল।
আজ রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, কোথাও ডালার মধ্যে মাছ লাফালাফি করছে। কোথাও পানির মধ্যে জীবিত মাছ। কোথাও মাছের ডালার মধ্যে সাজানো আছে কাতলা মাছ। এর সঙ্গে আছে বড় আকারের রুই, মৃগেল ও কার্প মাছও। কাতলা মাছের কেজি সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা, সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা। মাছের আকার ভেদে দরদাম নির্ধারণ করা হয়। দেশি কাতলা (কুমিল্লার পুকুরের মাছ) মাছের ওজন কম; তবে দাম বেশি, স্বাদও ভালো। যশোর, সাতক্ষীরা ও রাজশাহীর মাছের ওজন বেশি, দামও বেশি। রুই মাছ ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, শতবর্ষের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কুমিল্লা নগরের রাজগঞ্জ বাজারে কাতলা মাছের মেলা বসে। মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা বড় আকারের কাতলা মাছ নিয়ে হাজির হন। মাছের আকার ও ওজন অনুযায়ী দরদাম নির্ধারিত হয়। বৈশাখে অতিথি আপ্যায়ন ও স্বজনদের উপহার দেওয়া হয় কাতলা মাছ। মেলাকে কেন্দ্র করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে বাজারে। থাকে উত্সুক জনতার ভিড়ও। মেলায় হাজার হাজার কাতলা মাছ বিকিকিনি হচ্ছে। রাত পর্যন্ত এই মেলা চলবে। এবার গরম বেশি পড়ায় ব্যবসায়ীরা মেলায় মাছ কম এনেছেন।
মেলায় ৯ কেজি ওজনের একটি জীবিত কাতলা মাছ বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ২০০ টাকায়। প্রতি কেজি মাছের দাম ৮০০ টাকা। পাঁচ কেজি ওজনের রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকা কেজি।
মেলায় মাছ কিনতে এসেছেন কুমিল্লা নগরের রানীরদিঘির এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘মাছের দাম অনেক বেশি। তাই ছোট আকারের একটি রুই মাছ নিয়েছি ৪০০ টাকা কেজি দরে।’
রাজগঞ্জ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রবিউল আউয়াল বলেন, চাঁদপুরের কচুয়ার বিভিন্ন পুকুর, কুমিল্লার দেবীদ্বার, মুরাদনগর ও ব্রাহ্মণপাড়া এলাকা থেকে মাছ ওঠানো হয় মেলায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও আখাউড়া, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, যশোর থেকেও ব্যবসায়ীরা মাছ এনেছেন।
কুমিল্লার ইতিহাসবিদ আহসানুল কবীর বলেন, কাতলা মাছের মেলার বয়স ১০০ পার হয়েছে। মেলা থেকে বড় মাছ কিনে আত্মীয়স্বজনের বাসায় পাঠানো হয়। এই সময়ে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা মাছ দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করেন।
কুমিল্লা জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক গোপাল দত্ত চৌধুরী বলেন, এবার হিন্দু-মুসলিম সবাই একই দিনে রাজগঞ্জ বাজারে মাছ কিনতে গেছেন। ফলে ক্রেতা বেশি, মাছ কম।