শরীয়তপুরের জাজিরায় দাউদ খান নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতের মেয়ে ও স্ত্রীর স্বজনদের আহাজারি। শনিবার সকালে
শরীয়তপুরের জাজিরায় দাউদ খান নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতের মেয়ে ও স্ত্রীর স্বজনদের আহাজারি। শনিবার সকালে

শরীয়তপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার আসামিকে কুপিয়ে হত্যা

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মেছের আলী মুন্সিকান্দি গ্রামে দাউদ খান (৫০) নামে হত্যা মামলার এক আসামিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় ওই ব্যক্তির বাড়ির সামনে দুর্বৃত্তরা তাঁকে হত্যা করে ফেলে যায়।

আজ শনিবার সকালে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। স্বজনদের দাবি, জমিজমা ও মামলাসংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত দাউদ খান উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের মেছের আলী মুন্সিকান্দি গ্রামের মৃত ইসমাইল খানের ছেলে।

নিহত দাউদ খান একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মাদবর হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। আজ সকালে নিহতের স্বজনেরা ওই মামলার বাদী মোজাম্মেল হক মাদবরকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে মারধর করেন। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সূত্র জানায়, গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নাওডোবা সিকদার মার্কেট এলাকা থেকে মেছের আলী মুন্সিকান্দি গ্রামে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন দাউদ খান। সকাল সাতটার দিকে এলাকাবাসী তাঁকে বসতঘরের সিঁড়ির কাছে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তখন দাউদের পরিবারের সদস্যদের কেউ বাড়িতে ছিলেন না। এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠায়।

নিহত ব্যক্তির স্ত্রী শাকিলা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামীর সঙ্গে জমিজমা নিয়ে স্থানীয় রমজান আলীর বিরোধ আছে। মোজাম্মেল মাদবরের সঙ্গে একটি মামলা ও জমি নিয়ে বিরোধ আছে। তাঁরা তাঁর স্বামীকে হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে তাঁরা ধারণা করছেন। তিনি হত্যাকারীদের বিচার চান। নিহত দাউদের মেয়ে নিঝুম বলেন, ‘আমার বাবাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে মাথা ও মুখ বিকৃত করে দেওয়া হয়েছে। শেষবারের মতো বাবার মুখটা দেখতে পেলাম না। সন্তান হিসেবে কীভাবে মেনে নেব? এভাবে কেউ কাউকে হত্যা করতে পারে?’

দাউদ খান

২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেমর নাওডোবা মেছের আলী মুন্সিকান্দি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় তাঁর ছেলে মোজাম্মেল মাদবর বাদী হয়ে ২৯ জনের বিরুদ্ধে জাজিরা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার ৩ নম্বর আসামি ছিলেন দাউদ খান। ওই মামলার আসামিরা বিভিন্ন সময় মোজাম্মেল ও তাঁর ভাইদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করেছেন।

নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মোতাহার মাদবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবার হত্যা মামলার আসামি দাউদ খানসহ ২৯ জন। মামলাটি বিচারাধীন। কারা দাউদকে হত্যা করেছে, আমরা কিছুই জানি না। দাউদের আত্মীয়-স্বজনেরা সকালে আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি দিয়েছে। আমার ভাইকে ধরে নিয়ে মারধর করেছে। এ ঘটনা নিয়ে আমরা আতঙ্কে আছি।’

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শরিফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাতটার দিকে গ্রামের মানুষ থানায় খবর দেন, এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে ফেলে রেখে গেছে। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। ওই ঘটনায় একজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। জমিজমা ও এলাকার বিরোধ নিয়ে হত্যাকাণ্ডটি ঘটতে পারে। তাঁরা তদন্ত করে প্রকৃত কারণ খোঁজার চেষ্টা করছেন। এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাই মামলা হয়নি।