রান্নাঘরে জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণে ধসে গেছে বাড়ির দেয়াল। সোমবার সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের কাটুরাইল ঋষিপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে
রান্নাঘরে জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণে ধসে গেছে বাড়ির দেয়াল। সোমবার সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের কাটুরাইল ঋষিপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে

কেরানীগঞ্জে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় ছেলের বিরুদ্ধে মামলা

ঢাকার কেরানীগঞ্জে গ্যাস সিলিন্ডারে মাদকসেবী ছেলের দেওয়া আগুন থেকে বিস্ফোরণে মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত উমা রানীর (৬০) ছেলে সঞ্জয় চক্রবর্তী বাদী হয়ে তাঁর ভাই দেবা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন।

এ ঘটনায় আহত আরও পাঁচজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে উমা রানীর মেয়ে বিনা চক্রবর্তী (৪০), নাতি পিনাক চক্রবর্তী (১৫) ও অগ্নিসংযোগকারী ছেলে দেবা চক্রবর্তী (২৮) আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিবেশী লিপি চক্রবর্তী (৩০) ও পথচারী স্বপন রাজবংশী (৫৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি রয়েছেন।

মামলা বিষয়টি নিশ্চিত করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন দেওয়ার অভিযোগে আজ দেবা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে তাঁর ভাই সঞ্জয় চক্রবর্তী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। আসামি দেবা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।

গতকাল সকালে পোলায় কামের কথা কইয়া এক লাখ টাকা চায়। সেই টাকা না দিলে তার মা, বোন ও পরিবারের লোকজনগো ডাইক্যা আইনা বলে বলে, অহন টাকা দিবি, নইলে তগো সবাইরে শেষ কইরা দিমু। এই কথা বইলা দেবা গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন ধরাইয়া দেয়। ভগবান ডাক দিবার আগেই নিশাখোর পোলাডা তার মায়রে (উমা রানী) চিতায় পাঠাইলো।
বিমল ঠাকুর, নিহত উমা রানীর স্বামী

গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের কাটুরাইল ঋষিপাড়া এলাকার চারতলা একটি ভবনের নিচতলায় এ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ বিস্ফোরণের ঘটনায় এক পরিবারের ৪ জনসহ ১০ জন আহত হন। বিস্ফোরণে ঘরের দেয়াল ধসে গেছে। ওই রাতেই রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উমা রানীর মৃত্যু হয়।

উমা রানী কাটুরাইল ঋষিপাড়া এলাকার পুরোহিত বিমল ঠাকুরের স্ত্রী। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, উমা রানীর শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। এ ছাড়া বীণা চক্রবর্তীর শরীরের ৮৫ শতাংশ, পিনাকের শরীরের ২৪ শতাংশ ও দেবা চক্রবর্তীর শরীরের ১৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাঁদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

নিহত উমা রানীর স্বামী বিমল ঠাকুর আহাজারি করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার পোলা দেবা নেশাখোর। ওই সবসময়ই আমার আর তার মায়ের কাছ থেইক্যা নিশার লাইগ্যা টাকা নিত। যখন না দিতাম, তখন আমাগো মারধর করত। গতকাল সকালে পোলায় কামের কথা কইয়া এক লাখ টাকা চায়। সেই টাকা না দিলে তার মা, বোন ও পরিবারের লোকজনগো ডাইক্যা আইনা বলে বলে, অহন টাকা দিবি, নইলে তগো সবাইরে শেষ কইরা দিমু। এই কথা বইলা দেবা গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন ধরাইয়া দেয়। এতে গ্যাস সিলিন্ডার বাস্ট (বিস্ফোরণ) হয়ে আমার বউ, নাতনি, মাইয়াসহ পাঁচজন আগুনে পুইড়া যায়। ভগবান ডাক দিবার আগেই নিশাখোর পোলাডা তার মায়রে (উমা রানী) চিতায় পাঠাইলো।’

মাদকসেবী ছেলের দেওয়া আগুন থেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরটি দেখছেন বিমল ঠাকুর। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী উমা রানী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাওটাইল ঋষিপাড়া এলাকায়

বিমল ঠাকুর জানান, দেবা দীর্ঘদিন কুয়েতে ছিলেন । দুই বছর আগে তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর পাড়ার নেশাখোর ছেলেদের সঙ্গে মিশে দেবাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। প্রায় সময়ই দেবা তাঁর স্ত্রীকে মারধর করতেন। নেশার টাকা না পেলে দেবা সবার সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করতেন। এ জন্য তাঁর স্ত্রী ত্যক্তবিরক্ত হয়ে বছরখানেক আগে সন্তান নিয়ে তাঁর মায়ের বাড়িতে চলে যান। এর পর থেকে দেবা আরও খারাপ হয়ে যান। আরও বেশি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

বিমল ঠাকুর বলেন, ‘একটা পরিবারের একজনও যদি নিশাখোর হয়, তাইলে ওই পরিবারে আর সুখ থাকে না, পরিবারডা ধ্বংস হইয়া যায়। পোলাডা নিশাখোর হওয়ায় আজ আমগো পরিবারের এ অবস্থা। আর কারও ঘরের পোলা যেন নিশাখোর না হয়। এমন যেন আর কারও ভাগ্যে না ঘটে।’

আজ সকালে ক্ষতিগ্রস্ত ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, চারতলা ভবনের নিচতলায় দেয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। দেয়ালের কিছু কিছু জায়গার ইট খসে পড়েছে। ঘরের মালামাল ও আসবাবপত্র ছড়িয়ে–ছিটিয়ে এদিক সেদিক পড়ে আছে। ভবনটির সামনের অংশের নিচতলায় মুদিদোকানে রুটি, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারসামগ্রী ও পানির বোতল মেঝেতে পড়ে আছে। দোকানের শাটার একদিকে হেলে পড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা উৎসুক মানুষ ভবনটির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।

বিমল ঠাকুরের প্রতিবেশী সাধু চক্রবর্তী জানান, ‘বিমল ঠাকুরের মাদকসেবী ছেলে দেবার কারণেই আজ আমাদের এলাকার লোকজনদের অকালে প্রাণ দিতে হচ্ছে। তাঁদের চারতলা ভবনের পেছনে আমাদের একতলা বাড়ি। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আমাদের বাড়ির দেয়ালে ফাটল ধরেছে। কিছু অংশ ভেঙেও পড়েছে।’

এদিকে, গতকাল বিকেলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁরা বিমল ঠাকুরের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও প্রতিবেশী হেমন্ত সাহার একতলা ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। এ সময় তাঁরা ভবনটির সামনে লাল ফিতা টাঙিয়ে দেন।