সুনামগঞ্জে গতকাল মঙ্গলবার রাতে বৃষ্টি হয়নি। একই সময়ে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি কম এসেছে। ফলে সুরমা নদীর পানি কমেছে। আজ বুধবার সকাল ৯টায় শহরের ষোলঘর পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ২৫ মিলিমিটার।
বন্যার পানিতে প্লাবিত থাকায় সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কে আজ সকাল পর্যন্ত সরাসরি যান চলাচল বন্ধ আছে। পানি নেমে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়ক দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এখনো তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, সদর উপজেলার নিচু এলাকায়, লোকালয়ে, রাস্তাঘাটে পানি আছে। কিছু কিছু এলাকায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছে।
সুনামগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে বনানীপাড়া এলাকায় বাসিন্দা ও দিনমজুর জহুর আলী (৫৫) পরিবার নিয়ে গত ১৭ জুন থেকে টানা ৯ দিন ছিলেন একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। বসতঘর থেকে পানি নামায় বাড়িতে গিয়ে সবকিছু গোছগাছ করছিলেন। কিন্তু তিন দিন পরই আবার ঘর ছাড়তে হলো। আবার সপরিবার শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে বনানীপাড়া এলাকায় বাসিন্দা ও দিনমজুর জহুর আলী (৫৫) পরিবার নিয়ে গত ১৭ জুন থেকে টানা ৯ দিন ছিলেন একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। বসতঘর থেকে পানি নামায় বাড়িতে গিয়ে সবকিছু গোছগাছ করছিলেন। কিন্তু তিন দিন পরই আবার ঘর ছাড়তে হলো। আবার সপরিবার শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। জহুর বলেন, ‘মনে করছিলাম বন্যা গেছেগি। অখন দেখি শেষ অইবার আগে আরেক ধাক্কা দেলাই লো। আজকু দিনটা ধরছে। ইলা (এমন) থাকলে মনে অয় কাইল-পরশু যাইতাম পারমু।’
জহুর মিয়া একা নন, সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আবার অবনতি হওয়ায় তাঁর মতো অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। হঠাৎ ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামায় গত রোববার থেকে আবার নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়তে শুরু করে। গতকাল সকালে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে যায়। অনেকের ঘরবাড়িতে দ্বিতীয় দফায় পানি ওঠে। তলিয়ে যায় রাস্তাঘাটও। বিশেষ করে দ্বিতীয় দফায় গত রোববার রাত থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। জেলায় দুই দিনে বৃষ্টি হয় ৪৭০ মিলিমিটার।
আগেরবার পানিত ঘরের বেড়া ভাঙছে। ইতা ঠিক করতাম পারছি না। সাত দিন উপজেলায় (আশ্রয়কেন্দ্র) আছলাম। পানি যদি আরও বাড়ে, তাইলে আবার যাইত অইব। আমরার কষ্টর সীমা নাই।দীন ইসলাম, স্থানীয় বাসিন্দা
একই সময়ে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয় ৪৫৪ মিলিমিটার। এতে জেলার সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। অনেক রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। শহরের সুরমা নদীর তীরবর্তী অনেক এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
শহরের কালীপুর এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন (৫০) বলেন, ‘বাড়িত আইতাম অই পারলাম না। পানি কিছু কমছিল, অখন আবার বাড়ি গেছে।’
একই এলাকার বাসিন্দা দীন ইসলাম (৪২) বলেন, ‘আগেরবার পানিত ঘরের বেড়া ভাঙছে। ইতা ঠিক করতাম পারছি না। সাত দিন উপজেলায় (আশ্রয়কেন্দ্র) আছলাম। পানি যদি আরও বাড়ে, তাইলে আবার যাইত অইব। আমরার কষ্টর সীমা নাই।’
আজ সকালে সুনামগঞ্জ সদরের পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, ‘শহরে পানি কমলেও কিছু কিছু এলাকা এখনো ডুবে আছে। ভারী বৃষ্টি না হলে, পানি শিগগিরই কমে যাবে বলে আশা করি।’
সুনামগঞ্জে চলতি মৌসুমে এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় ১৭ জুন। এদিন বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৩৬৫ মিলিমিটার। এরপরই পুরো জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। তখন বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করলে গত রোববার রাত থেকে আবার ভারী বৃষ্টি শুরু হয়।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন জানান, এবার তাঁর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে গত দুই দিন ব্যাপক পাহাড়ি ঢল নেমেছে। এ কারণেই পানি বেড়েছে। তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে গতকাল পাহাড়ি ঢল কম নেমেছে বলে জানান তিনি।
সড়ক নিয়ে আফতাব উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাহাড়ি ঢল নামলেই সড়কের কয়েকটি স্থান প্লাবিত হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন উপজেলার বাসিন্দারা। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো উদ্যোগ নেই।
এদিকে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, গতকাল দিনে ও রাতে বৃষ্টি কম হয়েছে। তাই নদীর পানি কমছে। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। উজানের ঢলের সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হলে পানি বাড়তে পারে।