ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাড়ে তিন বছর আগে সংঘর্ষে এক কিশোর নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৩৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাফফর হোসেন।
মামলাটির বাদী জেলা শহরের কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাগর মিয়া। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সামনে দাতিয়ারা এলাকায় গুলিতে তাঁর ছেলে আশিক মিয়া (১৭) মারা যায়। আশিক সেখানকার একটি ওয়ার্কশপের কর্মচারী ছিল।
এ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোকতাদিরের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯টি মামলা হলো। এর মধ্যে ছয়টি হত্যা, একটি গুম ও দুটি বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে হওয়া মামলা। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন।
মামলার এজাহারে ৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ জনকে। অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক তানজিল আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক মনির হাসেন, উপদপ্তর সম্পাদক সুজন দত্ত, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, সদস্য রফিকুল ইসলাম ও হাসান সারওয়ার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি লোকমান হোসেন, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হাসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি শাহনুর ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হাসেন, সাবেক সহসভাপতি দেলায়ার হাসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসার পর সেদিন বেলা তিনটার দিকে ৩০০ থেকে ৫০০ তৌহিদি জনতা মোদি ও ভারতবিরোধী স্লোগান দিয়ে পুনিয়াউট চৌরাস্তার মোড় থেকে মিছিল বের করেন। তাঁরা কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দাতিয়ারা হয়ে শহরের কাউতলী গোলচত্বরের দিকে অগ্রসর হন। এ সময় মামলার প্রধান আসামি মোকতাদিরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কাউতলী গোলচত্বরে জড়ো হন। তৌহিদি জনতার মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য আসামিরা হাতবোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেন। এতে জানমালের অনেক ক্ষতি হয়। একপর্যায়ে তাঁরা গুলিবর্ষণ শুরু করলে আশিকের বুকে গুলির আঘাত লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। মরদেহ উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর বিষয়ে কোনো কাগজপত্র দেয়নি এবং কোনোরকম ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ বাড়িতে নিয়ে দাফন করতে বাধ্য করে।
মামলার বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, একটি হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী মোকতাদিরকে প্রধানসহ ৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।