কিশোরগঞ্জের শহরের রথখোলা এলাকায় এসে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে বিএনপির পদযাত্রা। এ সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে
কিশোরগঞ্জের শহরের রথখোলা এলাকায় এসে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে বিএনপির পদযাত্রা। এ সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে

কিশোরগঞ্জে পদযাত্রায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ, শতাধিক আহত

কিশোরগঞ্জে পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের রথখোলা ঈশা খাঁ সড়কে সংঘর্ষের সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের পাশাপাশি লাঠিপেটা করে। এতে বিএনপির নেতা-কর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছে। এ সময় দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পদযাত্রায় অংশ নিতে আজ সকাল থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠে জড়ো হন। সেখানে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমসহ কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন।

বিএনপি নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কিশোরগঞ্জে শহরের রথখোলা ঈশা খাঁ সড়কে

এরপর সোয়া ১২টার দিকে গুরুদয়াল কলেজ মাঠ থেকে পদযাত্রা শুরু হয়, যা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গৌরাঙ্গ বাজার মোড় হয়ে স্টেশন রোডের পুরোনো স্টেডিয়ামে দিকে যাচ্ছিল। প্রতিটি মোড়ে পুলিশ থাকলেও শুরুতে কোনো বাধার মুখে পড়েনি পদযাত্রা। তবে মিছিলটি আখড়া বাজার মোড় অতিক্রম করে ঈশা খাঁ সড়কের রথখোলা দিকে আসতে থাকে তখন নূর মসজিদ পাশে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। পুলিশ ঐতিহাসিক রথখোলা মাঠে মিছিলটি ঢোকার জন্য নির্দেশ দেয়। এ সময় জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগোনোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে।

এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ এবং লাঠিপেটা করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। অপর দিকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে বিএনপির নেতা-কর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

সংঘর্ষের বিষয়ে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মোস্তাক সরকার প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির পদযাত্রা হাওয়ার কথা ছিল গুরুদয়াল কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে রথখোলা পর্যন্ত। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীরা শহরের মধ্যে যানজট সৃষ্টি করে রথখোলা মাঠে না গিয়ে পুরো শহরে প্রদক্ষিণ করতে চান। রথখোলা এলাকায় পুলিশ বাধা দিলে নেতা-কর্মীরা ব্যারিকেড ভেঙে সামনে জোর করে সামনে এগোনোর চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ হামলা করেন। পুলিশ জনগণের জানমাল রক্ষার্থে ও দায়িত্ব পালন করতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে কত রাউন্ড গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে, সেটা হিসাব করে বলতে হবে।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম বলেন, বিশাল মিছিল নিয়ে রথখোলা নূর মসজিদের পাশে আসতেই পুলিশ বাধা দেয় এবং বিনা উসকানিতে অতর্কিতে লাঠিপেটা ও নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে। এতে তাঁদের বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। বিনা কারণে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

শরীফুল আলম বলেন, ‘যতই হামলা, মামলা, বাধা আসুক স্বৈরাচার এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকবেন।’

পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি লায়লা বেগম, সহসভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান, রেজাউল করিম খান, জালাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্মসাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আলম ও আমিনুল ইসলাম, জেলা যুবদল সভাপতি মো. খসরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের, জেলা ছাত্রদল সভাপতি মারুফ মিয়া প্রমুখ।

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সংঘর্ষের সময় জেলা বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক ফয়জুল করিম, জেলা যুবদলের সভাপতি মো. খসরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলী মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক তারেকুজ্জামান, পল্লী ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার মুসা, সদর উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব সৈয়দ শাহ আলম, নিকলী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাফিউল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।