আখাউড়া-লাকসাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা রেলস্টেশন এলাকা এবং সালদা নদী রেলসেতুর নির্মাণকাজ বারবার বন্ধ হলেও আর বন্ধ হবে না। নির্মাণকাজ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হবে। আখাউড়া-লাকসাম রেলপথ নির্মাণের কাজ পুনরায় শুরু হওয়ার সাত দিনের মাথায় আজ শনিবার কসবা রেলস্টেশন এলাকা পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্যরেখার ১৫০ গজের ভেতর কাজ করার অভিযোগ তুলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কসবা রেলস্টেশন ও সালদা রেলসেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। পরে উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রায় আড়াই বছর বন্ধ থাকার পর ১২ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কসবা রেলস্টেশন, রেলপথ ও সালদা রেলসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সমস্যাগুলো সমাধান করে রেলস্টেশন ও সালদা রেলসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। সাত দিন ধরে পুরোদমে কাজ চলছে। এ নির্মাণকাজ শেষ হলে বাংলাদেশের জন্য যেমন ভালো হবে, তেমনি ভারতেরও জন্যও ভালো হবে। তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে আমাদের যে যোগাযোগ আছে, তা আরও গুরুপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কাজেই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।’
এ সময় মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব মিশনস আসাদ আলম সিয়াম, একই মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) রকিবুল হক, পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, বিজিবির কুমিল্লা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. আবুল কালাম শামসুদ্দিন রানা, ৬০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ আশিক হাসানউল্লাহ, আখাউড়া-লাকসাম রেলপথ নির্মাণকাজ প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন, কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আমিমুল এহসান খান, কসবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সঞ্জীব সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলজংশন থেকে লাকসাম রেলজংশন পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইনের কাজ চলছে। ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর মধ্যে প্রকল্পের বেশির ভাগ কাজ শেষ হলেও বিএসএফের বাধার মুখে কসবা রেলস্টেশন, স্টেশনের ডাবল লাইন ও সালদা রেলসেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল।
আখাউড়া-লাকসাম রেলপথ নির্মাণকাজ প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, পুরো প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ হলে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ২৩ জোড়া ট্রেন চালু আছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে এ পথে ৭২ জোড়া ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
আজ বেলা ১১টার দিকে কসবা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, কসবা সীমান্ত হাটসহ সব কটি হাট শিগগিরই খুলে দেওয়া হবে। চালু করা হবে আরও বেশ কয়েকটি সীমান্ত হাট। এ ব্যাপারে খুব শিগগিরই ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সীমান্ত হাটের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সীমান্তহাটগুলো হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সম্প্রীতির মেলবন্ধন। এ বন্ধন আরও মজবুত করতে সীমান্ত হাট খুলে দেওয়া হবে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের ১১ মার্চ কসবা সীমান্ত হাট বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে সীমান্ত হাট বন্ধ রয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা যায়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ২০৩৯ পিলারের কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা পৌর এলাকার তারাপুর ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার কমলাসাগর এলাকায় দুই দেশের সমপরিমাণ ১ একর ৫০ শতক জায়গাজুড়ে সীমান্ত হাট বসে। প্রত্যেক রোববার এ হাটের সাপ্তাহিক দিন। এতে ভারতের ২৫টি এবং বাংলাদেশের ২৫টি দোকান বসে।
২০১৫ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। সে সময় ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে এ হাটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। ওই বছরের ১১ জুন থেকে সপ্তাহের এক দিন এ হাট বসে।