সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে শহরের বিভিন্ন এলাকা। বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শহরের মধ্যবাজারে
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে শহরের বিভিন্ন এলাকা। বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শহরের মধ্যবাজারে

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, আতঙ্কে মানুষ

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে হু হু করে পানি বাড়ছে। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ২৭ সেন্টিমিটার। ৯টায় এখানে পানি বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। ছাতক উপজেলা সদরে সুরমা নদীর পানি ১৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জে গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৬৭ মিলিমিটার। তবে এখানে বৃষ্টি কম হলেও সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে এ সময় ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামছে।

জেলার ছাতক, সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। ছাতক-সিলেট সড়ক, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়ক প্লাবিত হওয়ায় সরাসরি যান চলাচল বন্ধ আছে।

সুরমা নদীর পানি তীর উপচে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা দ্রুত প্লাবিত হওয়ায় মানুষ চরম আতঙ্কে আছেন। অনেকেই ২০২২ সালের ১৬ থেকে ১৯ জুনের সেই ভয়াবহ বন্যার কথা মনে করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। শহরের অনেক রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকেছে মানুষের ঘরবাড়িতে।

ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, তাঁর উপজেলার সব কয়টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। উপজেলা পরিষদ চত্বর প্লাবিত হয়েছে। উপজেলায় তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। পানি বাড়ছে। পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরেও বন্যার পানি প্রবেশ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

গত রোববার এক রাতেই সুনামগঞ্জে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এটি সুনামগঞ্জে এই মৌসুমে এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড। গতকাল রাতে বৃষ্টি কম হয়েছে, তবে উজানের ঢলে পানি বাড়ছে। বিশেষ করে ভারতের সীমান্তঘেঁষা সদর, ছাতক, দোয়ারবাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম সাবেরিন বলেন, ‘লক্ষণ ভালো না, মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের বাড়িঘরে বন্যার পানি ঢুকছে। শহরের বড়পাড়া, তেঘরিয়া, উকিলপাড়া, হাসননগর, ওয়েজখালী, নতুনপাড়া, উত্তর আরপিননগর এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।’

৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আহসান জামিল বলেন, নদীতীরের অনেক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। পানি বাড়ছে। মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা সামছু মিয়া বলেন, ‘ঘরও পানি উঠছে, ভয়ে আছি। ২২ সালের লাখান বইন্যা অইলে ত সব শেষ।’

সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কে সরাসরি যান চলাচল চার দিন ধরে বন্ধ। ছাতকের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান রাস্তা ছাতক-সিলেট সড়কের পৌর এলাকার পেপার মিলের সামনে সড়ক প্লাবিত হওয়ায় সরাসরি গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

পাহাড়ি ঢলে দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের খাসিয়ামারা নদীতীরের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়া বক্তারপুর, চৌকিরঘাট, ইদ্রিসপুর, ঝিরারগাঁও, লক্ষ্মীপুর, নোয়াপাড়া, রসরাই, সুলতানপুর, এরুয়াখাই, মাঠগাঁও ও রণভূমি গ্রামে এখনো পানি আছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ কেউ সড়কের ওপর খুপরি তৈরি করে থাকছেন।

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পানি বাড়ছে, ‘সেই সঙ্গে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। অনেকের ঘরে পানি। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি। মানুষ যাবে কোথায়।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা স্বপন কুমার বর্মণ বলেন, গতকাল রাত থেকেই উপজেলায় পানি বাড়ছে। সকালে উপজেলা পরিষদের সামনে পানি দেখেছেন। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হবে বলে মনে হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। উজান থেকে ঢল নামলেই মূলত সুনামগঞ্জে নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়ে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল কমলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আগামী দুই দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে পানি বেড়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি আছে।