ছাত্রলীগের নির্যাতনের প্রতিবাদে রাবিতে এক কাতারে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক

শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ও চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার শাস্তির দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মানববন্ধন। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সামছুল ইসলামকে কক্ষে আটকে রেখে মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার শাস্তির দাবিতে এবার মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

এর আগে গত জুনে হলে ছাত্রলীগের দখলদারি ও সিট বাণিজ্যের প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। এবার তাঁরা ছাত্রলীগের নির্যাতনের প্রতিবাদে এককাতারে দাঁড়ালেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব, সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিভাবক নূর হোসেন মোল্লা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী, রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আবদুল মজিদ, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি নাইমুল ইসলাম, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান প্রমুখ। এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।

অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, শিক্ষাঙ্গনের চলমান সমস্যাগুলো এক অর্থে রাজনৈতিক। কিন্তু তাঁরা যেটাকে রাজনীতি বলেন, সেটা প্রকৃত অর্থে রাজনীতি নয়। রাজনীতির মৌলিক উপাদান কল্যাণকামিতা। কিন্তু তাঁরা এর অভাব বোধ করছেন। বর্তমানে যেটাকে রাজনীতি বলা হয়, সেটা স্বাভাবিকভাবেই অপরাজনীতি, ভণ্ডামি। এটারই চর্চা হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষকেরাও এর বাইরে নন।

সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, কয়েক দিন আগেও তাঁরা ছাত্রলীগের আসন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন। নানা সময়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক হিসেবে তাঁরা বারবার লজ্জিত হন। কী শিক্ষা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। এ দায় যেমন শিক্ষকদের, তেমনি প্রশাসনেরও।

অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, যে শিক্ষার্থী মুঠোফোন সার্ভিসিং করে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগানোর পাশাপাশি পরিবারকে সহযোগিতা করে; সেই শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ আবরারের মতো মেরে ফেলার হুমকি দিতে সাহস পায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে এর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিভাবক নূর হোসেন মোল্লা বলেন, শোকের মাসেও তাদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত শিক্ষা নেওয়ার জন্যই শিক্ষার্থীদের পাঠানো হয়। এটা কোনো মাস্তানির জায়গা নয়।

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আবদুল মজিদ বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই ছাত্রলীগ এমনটা করার সাহস পাচ্ছে।

গত শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কক্ষে আটকে রেখে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামছুল ইসলাম। তিনি মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতেই ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর দপ্তরে অভিযোগ দেন। এরপর রাতেই তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের একটি অংশে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা হুমকি দিয়ে তাঁকে বলেন, কাউকে বললে আবরারের যে অবস্থা হয়েছে, সেই অবস্থা হবে।

অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নিল কমিটি

শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি গতকাল রোববার রাতে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে। কমিটির আহ্বায়ক সহকারী প্রক্টর এবং তড়িৎ ও বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুর রহমান বলেন, তাঁরা পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে বাদী ও বিবাদীর সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। এখন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাক্ষী ও অন্যদের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা।