একটি খুনের বদলা নিতেই আরেকটি খুন। নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ৮০ বছরের বৃদ্ধ আবদুল খালেক ওরফে খাজা খালেক প্রতিশোধের বলি হয়েছেন। তাঁর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের পর পুলিশ এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে।
গতকাল রোববার বিকেলে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য গণমাধ্যমকে অবহিত করেন জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন। ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশের অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। প্রেস ব্রিফিংয়ে বিজয়া সেন উল্লেখ করেন, বৃদ্ধ খাজা খালেককে হত্যার ঘটনায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন উপজেলার চর রশিদ গ্রামের মন্তাজ মিয়ার বাড়ির মো. জয়নাল আবেদীনের ছেলে আইয়ুব আনছারী (২৯), পশ্চিম চরজব্বর গ্রামের শফিক উল্যার ছেলে আবদুল হাকিম (২৩) ও একই গ্রামের রেজাউল হক চৌধুরীর ছেলে মো. রাজু (২২)।
পুলিশ জানায়, আবদুল খালেককে গলা কেটে হত্যা করেন আইয়ুব আনছারী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আবদুল হাকিম ও মো. রাজু। আইয়ুব আনছারীর সঙ্গে আবদুল খালেকের কোনো বিরোধ ছিল না। তিনি মো. শফিক নামের একজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী এই খুন করেন। শফিকই খুনের মূল পরিকল্পনাকারী।
পুলিশ জানায়, খুনের পরিকল্পনাকারী মো. শফিকের বাবা ২০২০ সালের ৭ আগস্ট খুন হন। ওই খুনের মামলার অন্যতম আসামি আবদুল খালেকের ছেলে মো. আবদুল। নিজের বাবার খুনের বদলা নিতে গিয়ে আইয়ুব আনছারীকে দিয়ে মো. আবদুলের বাবা আবদুল খালেককে খুন করান শফিক।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন গণমাধ্যমকে বলেন, বৃদ্ধ আবদুল খালেক হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর পুলিশ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন হিসেবে আসামি আইয়ুব আনছারী নামের এক ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আইয়ুব আনছারী এই হত্যাকাণ্ডে তাঁর সহযোগী হিসেবে আবদুল হাকিমের নাম প্রকাশ করেন। পরবর্তী সময়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আবদুল হাকিমকে উপজেলার কাঞ্চনবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর পুলিশ দুই আসামিকে আদালতে উপস্থিত করলে আদালত আইয়ুবকে চার দিন ও আবদুল হাকিমের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ জানায়, রিমান্ডে থাকা আসামি আবদুল হাকিম পুলিশের কাছে আরও একজনের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য দেন। তাঁর দেওয়া তথ্য থেকে পুলিশ মো. রাজুকেও গ্রেপ্তার করে। এরপর রাজুকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি পুরো ঘটনা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। গ্রেপ্তার তিন আসামির বক্তব্য থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে শফিকের বাবা খুন হন। ওই ঘটনায় শফিক বাদী হয়ে মো. আবদুলসহ কয়েকজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন। আবদুল খালেক হত্যার সঙ্গে জড়িত আইয়ুব আনছারীও ওই মামলার আসামি ছিলেন। মো. শফিক মামলার আসামির তালিকা থেকে আইয়ুব আনছারীকে বাদ দেওয়ার প্রলোভন দেখান। মামলা থেকে অব্যাহতির বিনিময়ে আবদুলের বাবা আবদুল খালেককে খুন করতে বলেন। খালেককে হত্যার জন্য আইয়ুব রাজু ও হাকিমকে ভাড়া করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত শনিবার রাতে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে খালেককে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
পুলিশ জানায়, আইয়ুবের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া আলামত হিসেবে রাজুর পরিধেয় পোশাক ও নিহত আবদুল খালেকের ব্যবহৃত লাঠি জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার তিন আসামির মধ্যে রাজু ও হাকিম আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে গতকাল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে হত্যার মূল অভিযুক্ত মো. শফিক পলাতক বলে জানা গেছে।