জন্মদিনে প্রবাসী বন্ধু ‘সংসদ সদস্য’ হিসেবে দেখতে চাওয়ার পর এলাকাছাড়া গফরগাঁওয়ের মেয়র

গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র এস এম ইকবাল হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র এস এম ইকবাল হোসেন ওরফে সুমনের জন্মদিনে ফেসবুকে তাঁর এক প্রবাসী বন্ধু লিখেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে তোমাকে গফরগাঁওয়ের সংসদ সদস্য হিসাবে দেখতে চাই।’ বন্ধুর এমন শুভকামনায় তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন মেয়র। এ ঘটনায় মেয়রের ওপর ‘বিরাগভাজন’ হন স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ ওরফে বাবেল।

ওই ঘটনার এক মাস পর গত ২২ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের পর মেয়রের সমর্থকদের ওপর সংসদ সদস্যের সমর্থকেরা হামলা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকেই মেয়র ইকবাল হোসেন ও তাঁর সমর্থকেরা গফরগাঁও ছেড়ে যান। ঘটনার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এলাকায় ফেরেননি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দুবার নির্বাচিত মেয়র ইকবাল হোসেন। অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজের হুমকির ভয়ে মেয়র এলাকাছাড়া আছেন। যদিও মেয়র এ ঘটনায় পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ করেননি।

এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে মেয়র ইকবাল হোসেন মুঠোফোনে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি। তবে গত ২২ এপ্রিল থেকে গফরগাঁওয়ে না থাকার কথা তিনি স্বীকার করেছেন। কেন যাচ্ছেন না জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে চাননি। গফরগাঁওয়ে না যাওয়ার পেছনে কারও হুমকি আছে কি না জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘হুমকি ও ভীতি আছে। তবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই যাব।’ এরপর ব্যস্ত আছেন বলে তিনি ফোন রেখে দেন।

অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বা আমার পক্ষে কেউ মেয়রকে কোনো ধরনের হুমকি দেননি। আমার ভয়ে মেয়র এলাকাছাড়া, বিষয়টি সম্প্রতি শুনেছি। শোনার পর ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) ও ওসিকে (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) বিশেষভাবে মেয়রকে আশ্বস্ত করতে বলেছি যে আমার বা আমার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের হুমকি নেই। কিন্তু মেয়র এলাকায় আসছেন না কেন, তা আমার জানা নেই। সামনে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের আগে এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। মেয়র ভাইরাল হওয়ার জন্য এসব করছেন।’

সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ

ইকবাল হোসেন দ্বিতীয় মেয়াদে গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র। দুবারই তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। গফরগাঁওয়ের সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজও টানা দুবারের সংসদ সদস্য। তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল না। গত ২২ এপ্রিলের পর তাঁদের সমর্থকেরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যান। অভিযোগ আছে, ওই দিন সংসদ সদস্যের সমর্থকেরা মেয়রের সমর্থকদের মারধর ও বাড়িঘরে হামলা করেন। এর পর থেকেই মেয়রের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মীরা পলাতক। তবে এ নিয়ে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করা হয়নি।

স্থানীয় রাজনীতিতে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় কেউ নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গফরগাঁও পৌর শহরের একাধিক বাসিন্দা বলেন, সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ ও মেয়র ইকবাল হোসেনের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। নানা কারণে সম্পর্কের অবনতি হয়। গত ২৭ মার্চ মেয়রের জন্মদিন ছিল। ওই দিন মেয়রের প্রবাসী একজন বন্ধু শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে তাঁকে গফরগাঁওয়ের সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চান বলে পোস্ট করেন। মেয়রও বন্ধুকে ধন্যবাদ জানান। এরপর সংসদ সদস্যকে বোঝানো হয়, মেয়র আগামী নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে পারেন। এর পর থেকেই বিরোধ শুরু হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেয়রকে এলাকা ছাড়া করেই শেষ হয়নি। এরপর ১৫ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেন গফরগাঁও পৌরসভার ১০ জন কাউন্সিলর। ওই অনাস্থায় নেতৃত্ব দেন সংসদ সদস্যের সমর্থক হিসেবে পরিচিত গফরগাঁও পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহজাহান সাজু। অনাস্থায় মেয়রের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, অপশাসন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করা হয়। তবে গত ৪ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, সরেজমিন তদন্ত করে মেয়রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র কোনো হুমকি বা ভীতির কারণে নিজের এলাকা ও কার্যালয়ে যেতে পারছেন না, এমন কোনো অভিযোগ লিখিতভাবে তিনি তাঁদের কাছে করেননি।