নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মী রাব্বি খানকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগের বিবদমান অপর পক্ষ এ নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাব্বি খান। রোববার দুপুরে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
রাব্বি খান বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বর্তমানে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন। ৭ আগস্ট রাব্বি খানসহ চার শিক্ষার্থী নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করেছিলেন।
রাব্বি খান বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী অমিত হাসান ওরফে রক্তিম গ্রুপের সক্রিয় কর্মী। প্রতিপক্ষ মহিউদ্দীন আহমেদ ওরফে সিফাতের নেতৃত্বে এ নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে রাব্বি অভিযোগ করেন।
বগি-দা আনার পর মহিউদ্দীন নিজেই দায়ের কাঠের হাতল দিয়ে তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটুতে ও ডান পায়ের হাঁটুর নিচে পেটান। তাঁর সহযোগীরা তাঁর মাথায় ও পিঠে কিলঘুষি মারেন।রাব্বি খান, ছাত্রলীগ কর্মী
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকলেও মহিউদ্দীন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী। অন্যদিকে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয়। এই পক্ষের নেতৃত্বে আছেন অমিত হাসান ওরফে রক্তিম ও ময়িদুর রহমান ওরফে বাকি।
রাব্বি অভিযোগ করেন, রোববার দুপুর ১২টায় তাঁর ক্লাস টেস্ট ছিল। প্রক্টরের আশ্বাসে তিনি ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দিতে যান। পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে বেলা ১টার দিকে তিনি উপাচার্যের বাসভবনের ফটক থেকে শহরে যেতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় চারজন সন্ত্রাসী এসে তাঁকে ধরেন। তাঁর পেছনে আরও ১০-১২ জন ছিলেন। পরে তাঁকে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নাজেমস নামের একটি হোটেলের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মহিউদ্দীন আহমেদ ৩০-৩৫ জন সন্ত্রাসী নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। মহিউদ্দীন তাঁর এক কর্মীকে হলের তাঁর কক্ষ থেকে বগি-দা নিয়ে আসতে নির্দেশ দেন। বগি-দা আনার পর মহিউদ্দীন নিজেই দায়ের কাঠের হাতল দিয়ে তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটুতে ও ডান পায়ের হাঁটুর নিচে পেটান। তাঁর সহযোগীরা তাঁর মাথায় ও পিঠে কিলঘুষি মারেন। এভাবে পৌনে দুই ঘণ্টা আটকে রেখে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। খবর পেয়ে মহিউদ্দীনকে মুঠোফোনে কল করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন প্রক্টর। কিন্তু মহিউদ্দীন তা উপেক্ষা করে তাঁর ওপর নির্যাতন অব্যাহত রাখেন। পরে বেলা ২টা ৫১ মিনিটের দিকে প্রক্টর খোরশেদ আলম ঘটনাস্থলে আসেন এবং তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি একটি সভায় ছিলাম। পরে খবর জেনে ক্যাম্পাসের বাইরে ওই এলাকায় গিয়ে রাব্বিকে উদ্ধার করি এবং তার কাছে বিস্তারিত জানতে চাই। সে আমাকে পরে বিস্তারিত জানাবে এবং চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের যাওয়ার কথা বললে তাকে গাড়িতে তুলে দিয়েছি। আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। আর যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি অবশ্যই দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি দেখছি।’
রাব্বির অভিযোগ, মহিউদ্দীন আহমেদের অব্যাহত হুমকিতে নিরাপত্তা চেয়ে ৫ থেকে ৭ আগস্টের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁরা চার শিক্ষার্থী প্রক্টর ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করেছিলেন। আবেদনে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা মহিউদ্দীন আহমেদ ও তাঁর অনুসারীদের হুমকির কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে উল্লেখ করেছিলেন। নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করা অন্যরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ইরাজ রব্বানী, রসায়ন বিভাগের সাইমুন ইসলাম ও বাংলা বিভাগের সাব্বির হোসেন। তাঁরা চারজনই অমিত হাসানের অনুসারী।
বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম সংঘাতের সূচনা হয় গত ৫ জুলাই রাতে। ওই দিন দিবাগত রাত একটার দিকে ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় উভয় পক্ষের সাতজন আহত হন।
অভিযোগের বিষয়ে মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমার জানামতে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর আমি এ সম্পর্কে কোনো কিছু জানিও না। যদি কেউ এ ধরনের অভিযোগ করে থাকেন, তবে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম সংঘাতের সূচনা হয় গত ৫ জুলাই রাতে। ওই দিন দিবাগত রাত একটার দিকে ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় উভয় পক্ষের সাতজন আহত হন। এরপর ঈদুল আজহার ছুটির পর ২০ জুলাই ক্যাম্পাস খুললেও প্রতিমন্ত্রীর পক্ষের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে আসছেন না। মূলত মেয়রের অনুসারীদের হামলার আশঙ্কায় তাঁরা ক্যাম্পাসে আসছেন না।
এ বিষয়ে অমিত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভয়ে ক্যাম্পাসে যাচ্ছি না, বিষয়টি এমন নয়। ঈদের ছুটির পর ক্যাম্পাস খোলার দিন অন্য পক্ষ বহিরাগতদের নিয়ে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। এ জন্য ক্যাম্পাসে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা সংঘাতে যাইনি। এরপর আমাদের অনুসারী শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হুমকি ও অস্ত্র নিয়ে খোঁজাখুঁজি করা হচ্ছে। এ জন্য তাঁরা নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই চার শিক্ষার্থী নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিল। এরপরও প্রকাশ্যে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এভাবে সন্ত্রাসীদের লাগামহীন তৎপরতা চলতে পারে না।