উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় ভোট হবে আগামীকাল বুধবার। ভাটির এই দুই উপজেলাতেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। ‘বিভক্ত’ আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে এই দুই উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত দুই নেতার লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের ভাষ্য, দুই উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এতে দলের ভোট ভাগাভাগি হবে। অন্যদিকে বিএনপির রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত প্রার্থী আছেন একজন করে। তাই শেষ পর্যন্ত দলটির বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গেই লড়াই করতে হবে আওয়ামী লীগের নেতাদের। আর আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টাও আছে বিএনপির নেতাদের। আছে সম্প্রদায়গত ভোটের প্রভাব। তবে বিএনপির লোকজন ভোটে না গেলে তাঁদের বহিষ্কৃত নেতারা তেমন সুবিধা করতে পারবেন না।
দিরাই উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন। তাঁরা হলেন দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আজাদুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায়, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রিপা সিনহা, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) মো. গোলাপ মিয়া।
প্রদীপ রায় গত নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন, সামান্য ভোটে পরাজিত হন। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তার লোক। প্রদীপ ভোটারদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তিনি নির্বাচিত হলে উন্নয়ন বেশি হবে। রঞ্জন রায়ও গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। গোলাপ মিয়া দুবারের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। রিপা সিনহা বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। সবাই মাঠে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন।
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, প্রদীপ রায় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ, এটা সবাই জানেন। এ জন্য ‘সুনাম-বদনাম’ দুটিই আছে তাঁর। এখানে আওয়ামী লীগের অন্য যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা ভোটের হিসাবে ভালো প্রভাব রাখবেন। তাই সহজে দলের কেউ পার পেতে পারবেন না।
এই সুযোগে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে এসেছেন গোলাপ মিয়া। দলের নেতা–কর্মীরা তলেতলে তাঁর পক্ষে নানাভাবে কাজ করেছেন। গোলাপ বলেন, ‘দলে নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন। দিরাই উপজেলার লুটেরাদের ভোট দেবে না, যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হয়, তাহলে আমি জয়ী হব।’
দিরাই পৌর শহরের বাসিন্দা শিক্ষক শামসুল ইসলাম বলেছেন, ‘ভোট নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম। তবুও আমরা চাই ভোট নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হোক।’
দিরাই উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯৭ হাজার ৬৮৭ জন ও নারী ৯৫ হাজার ৮৩৮ জন। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৭৪টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে।
এদিকে শাল্লা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। তাঁদের মধ্যে তিনজনই আওয়ামী লীগের। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও শাল্লা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অবনি মোহন দাস, যুবলীগের নেতা ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দিপু রঞ্জন দাস, আওয়ামী লীগের সমর্থক এস এম শামীম। এর বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার।
শাল্লায় আওয়ামী লীগ বিভক্ত। এক পক্ষ অবনি মোহন দাসের সঙ্গে, অন্য পক্ষ দিপু রঞ্জন দাসের সঙ্গে আছে। এ ছাড়া গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটা প্রভাব এখানেও আছে। সেটি হলো নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়া সেনগুপ্তার পক্ষে ছিলেন অবনি মোহন দাস।
অন্যদিকে দিপু রঞ্জন দাস ছিলেন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে। এ নির্বাচনেও সেই বিভক্তি আছে। তবে সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা ও আওয়ামী লীগ নেতা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ভোটের বিষয়ে নীরব রয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির প্রবীণ নেতা গনেন্দ্র চন্দ্র দাসের প্রতি বিএনপির নেতা-কর্মীদের সমর্থন রয়েছে, তবে প্রকাশ্যে কেউ মাঠে নেই। তিনি আওয়ামী লীগের এক পক্ষের সমর্থন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শাল্লা সদরের বাহাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, এবার তো দলীয় ভোট হচ্ছে না, তাই ভোটাররা দলের চেয়ে ব্যক্তিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন বেশি। প্রার্থীদের দুজন প্রবীণ আর দুজন নবীন। ভোটাররা সবকিছু বিবেচনায় রেখে ভোট দেবেন।
শাল্লা উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৯১ হাজার ৩৬৮। এর মধ্যে পুরুষ ৪৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং নারী ৪৫ হাজার ৪১২ জন। উপজেলার ৪ ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৩৭টি।