সুন্দরবনের কোলঘেঁষা খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর গ্রাম। গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে কয়রা নদী। নদীটি পেরোলেই সুন্দরবন। আজ শুক্রবার সকালে ওই গ্রামের লোকালয়ে এসে আটকা পড়ে একটি হরিণ। স্থানীয় বাসিন্দারা হরিণটিকে উদ্ধার করে বনরক্ষীদের ডেকে তাঁদের হাতে তুলে দেন। পরে হরিণটিকে বনে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
মহেশ্বরীপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজা গাজী বলেন, তাঁর বাড়ির পাশেই একটি মৎস্য ঘের আছে। ঘেরটির চারপাশে জাল দিয়ে ঘিরে রাখা। আজ সকাল সাতটার দিকে মৎস্যঘেরের দিকে গিয়ে দেখেন, ঘেরের পাড়ের জালে একটি হরিণ প্যাঁচিয়ে আছে। তাৎক্ষণিক আশপাশের লোকজনকে ডাক দিলে প্রথমে পাশের বাড়ির সাইফুল ইসলাম চলে আসেন। পরে তাঁরা দুজন মিলে দ্রুত হরিণটি জাল থেকে ছাড়িয়ে পাশের বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীদের খবর দেন। তাঁরা এলে তাঁদের হাতে হরিণটি তুলে দেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, হরিণটি দীর্ঘক্ষণ প্যাঁচিয়ে থাকায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। জাল থেকে হরিণটি ছাড়ানোর সময় মায়াবী চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল, আবার ভয়ও পাচ্ছিল। পরে গলায় গামছা প্যাঁচিয়ে হরিণটি উদ্ধার করে বনরক্ষীদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
সুন্দরবনের বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে ভাটার সময় নদীতে পানি একেবারেই কম থাকে। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় সুন্দরবনের হরিণসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী সহজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। তবে এলাকাবাসী সচেতন হওয়ায় তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে বন বিভাগকে খবর দিচ্ছেন। আজও নদী পেরিয়ে হরিণ লোকালয়ে ঢুকে পড়েছিল। গ্রামবাসী হরিণটি দেখতে পেয়ে বন বিভাগকে খবর দেন। সকাল ৮টার দিকে ২০–২৫ কেজি ওজনের পুরুষ হরিণটি নিয়ে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
সুন্দরবনের বাঘ প্রায়ই হরিণসহ নানা পশুপাখি শিকার করে খায় বলে জানান খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাসানুর রহমান। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে শিকারে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে কিছু হরিণ লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। উদ্ধারের পর সুন্দরবনের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ একটি স্থানে হরিণটিকে অবমুক্ত করা হয়েছে।
মহেশ্বরীপুর এলাকার বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহশিস সরদার বলেন, সুন্দরবনের কয়রা নদীর এক পাশে সুন্দরবন, অপর পাশে তাঁদের গ্রাম। নদীতে পানি কমে যাওয়ায় হরিণ লোকালয়ে চলে আসছে। এ ছাড়া বনের ভেতর খাদ্যসংকটও হতে পারে। এর আগেও কয়েকবার সুন্দরবন থেকে হরিণ আসার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর দুটি বাঘ নদী পার হয়ে এ গ্রামে ঢুকেছিল। গ্রামের রাস্তার ওপর দুটি বাঘের পায়ের অসংখ্য ছাপ দেখে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।