খুলনা সিটি নির্বাচন

ভোটের উত্তাপ নেই, চরমোনাই পীরের সফরে চাঙা ইসলামী আন্দোলন

খুলনার মেয়র প্রার্থী আবদুল আউয়ালের হাতে হাতপাখা তুলে দিচ্ছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। গতকাল নগরের গোয়ালখালী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। এখন পর্যন্ত শহরে ভোটের উত্তাপ নেই। বিএনপির মতো বড় দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় নির্বাচন একতরফা হবে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকেরা। শক্তিমত্তা ও বাস্তবতার নিরিখে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হবেন—এমন ধারণা থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহও দেখা যাচ্ছে না।

যাচাই-বাছাইয়ে টিকে যাওয়া তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সরব অবস্থানে আছেন। জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীর তৎপরতা এখনো চোখে পড়ার মতো নয়। এমন অবস্থায় নির্বাচনী কাজকে আরও গতিশীল করতে ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম দুই দিনের সফরে খুলনায় অবস্থান করছেন। তাঁর আগমনে খুলনায় দলটির নেতা–কর্মীরা উচ্ছ্বসিত। দলের প্রধান নেতার উপস্থিতি নেতা–কর্মীদের আরও চাঙা করবে বলে মনে করছেন নেতারা।

গতকাল সোমবার দুপুরে খুলনা নগরের গোয়ালখালী সৈয়দ ফজলুল করিম (রহ.) ফাউন্ডেশনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ খুলনা মহানগরের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ওলামা সম্মেলনে’ অংশ নেন চরমোনাই পীর। সেখানে তিনি খুলনার মেয়র প্রার্থী আবদুল আউয়ালের হাতে হাতপাখা তুলে দিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি ওলামাদের কাছে সহযোগিতা চান এবং দোয়া ও মানুষের কাছে প্রার্থীর পক্ষে দাওয়াতের আহ্বান জানান।

ওলামা সম্মেলনে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ইসলামের নাম–নিশানা মুছে দিতে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। আগামী প্রজন্মকে নাস্তিক বানাতে পাঠ্যপুস্তকে নানা বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও দেশের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। দুর্নীতিবাজদের বর্জন করে রাষ্ট্রে আলেমসমাজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন ইসলামী শাসনব্যবস্থার। কেবল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলেই দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তাই সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরামদের ঐক্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও দলের মেয়রপ্রার্থী আবদুল আউয়াল বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর খুলনার প্রায় সব মাদ্রাসায় আমি গিয়েছি। সেখানে যে পরিমাণ সাড়া পেয়েছি, তা অভূতপূর্ব। দলমত–নির্বিশেষে সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরামদের ঐক্য থাকলে একটা পরিবর্তন আসবেই।’

সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মুশতাক আহমাদ, খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা আবু সালেহ, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ খুলনা জেলার সভাপতি মাওলানা শেখ আবদুল্লাহ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা জেলার সভাপতি মাওলানা আবদুল্লাহ ইমরান প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন খুলনার নগর সভাপতি মুফতি গোলামুর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবদুল্লাহ ইয়াহইয়া।

দলটির নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, বিএনপি অংশ না নেওয়ায় খুলনায় গত দুই নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের পর ভোটার বেশি রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। গত নির্বাচনে খুলনায় তাঁরা তৃতীয় হলেও এবার শক্ত প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা গড়ে জয়ী হতে চান। এ জন্য প্রচার-প্রচারণা, সাংগঠনিক পূর্ণ শক্তি নিয়োগ, ভোটারদের আকৃষ্ট করা, ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ নানামুখী কৌশল নির্ধারণ করে পরিকল্পনামাফিক এগোচ্ছেন দলটির নেতারা।
দলটির ওয়ার্ডের পাশাপাশি ইউনিট কমিটিও রয়েছে। গত রমজানে সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে ইফতার মাহফিল করেছে ধর্মভিত্তিক এ রাজনৈতিক দলটি। প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের পাশাপাশি কেন্দ্রভিত্তিক আলাদা কমিটি গঠন করেছে তারা। গত ২০ মার্চ খুলনায় আবদুল আউয়ালকে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে।

জেতার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত নির্বাচনে সব ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী দিলেও এবার দলটি নগরের ৩১টি ওয়ার্ডের মাত্র ৩টিতে কাউন্সিলর প্রার্থী দিয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, বিভিন্ন সময়ের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দলের মেয়র প্রার্থীকে রেখে বিভিন্ন কাউন্সিলর প্রার্থী নিজেদের জয় নিশ্চিত করতে বেশি তৎপর থাকেন। এতে দলীয় মেয়র প্রার্থী ভোটের মাঠে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

ইসলামী আন্দোলন মহানগর শাখার সহসভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পরিচালক শেখ মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দলের প্রধান নেতা খুলনায় আসায় কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে একধরনের উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। এতে নির্বাচনী কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের বিষয়ে আশাবাদ জানিয়ে দলটির খুলনা সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পরিচালক বলেন, বিএনপি প্রার্থী না দেওয়ায় সরকারের প্রতি অনাস্থা জানাতে দলটির ভোট ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে আসবে। পাশাপাশি ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী অন্যান্য দলের ভোট হাতপাখার বাক্সে যাবে বলে বিশ্বাস তাঁদের।
আজ মঙ্গলবার দলটির খুলনা মহানগর শাখার উদ্যোগে তৃণমূল কর্মিসম্মেলনে উপস্থিত থেকে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে চরমোনাই পীরের। এ ছাড়া তাঁর কয়েক দফায় দলের নগর কমিটি ও কেসিসি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগদানের কথা রয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) খুলনা শাখার সভাপতি কুদরত-ই-খুদা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিন্দ্বন্দ্বিতাহীন, গতানুগতিক, নিরুত্তাপ একটা নির্বাচন হচ্ছে। শক্তির বিচারে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বিস্তর ফারাক। শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোটারদেরও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।