রাজধানীর মিরপুরের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গত রোববার ভোরে তুলে নেওয়া হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে। পাঁচ সমন্বয়কের সঙ্গে তাঁকেও রাখা হয় মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে। এরপর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর নুসরাতকে মিরপুরের সেই আত্মীয়ের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
নুসরাতকে পৌঁছে দেওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে বাবা ও মা ছিলেন। মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে নুসরাতের বাবা স্কুলশিক্ষক আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়ে সুস্থ আছে। বিশ্রামে আছে।’
আবদুল হালিমের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বাগোয়ান গ্রামে। স্থানীয় কেসিবিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি। সাত মাস পরেই অবসরে যাবেন। আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। জানালেন, তিনি বর্তমানে মিরপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে স্ত্রীসহ আছেন। নুসরাত আছেন পাশেই তাঁর ফুফুর বাসায়। বেলা সোয়া তিনটার দিকে মেয়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দেখা ও কথা হয়।
কথা প্রসঙ্গে আবদুল হালিম জানালেন, ‘মেয়ে যখন আসে, তখন মেয়ের কাছেই ছিলাম। শারীরিক ও মানসিকভাবে...বুঝতেই পারছেন। গোসল হয়নি। মেয়েকে গোসল করিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। ক্লান্ত ছিল। বাইরে থাকলে তো ঘুম হয় না। আমার খুব আদরের মেয়ে। এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মেয়েটি বড়। গ্রামের স্কুলে পড়েছে। গ্রামের কলেজে পড়াশোনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত। ছেলে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবে।’
আবদুল হালিম বলেন, ‘ডিবি হেফাজত থেকে ফিরে আসার পর মেয়েকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোনো আঘাত দেওয়া হয়েছে কি না? মেয়ে বলল, “না, আব্বু।” তখন লাখ লাখ শুকরিয়া বলেছি। কারণ, এগুলো ভয় পাইতাম। ডিবি কার্যালয়ে মেয়ে আলাদা থাকত।’
৩২ ঘণ্টা অনশনে ছিলেন জানিয়ে স্কুলশিক্ষক এই বাবা বলেন, ‘মেয়েকে প্রথম দেখার পর জড়িয়ে ধরে চুমা খেয়েছি। মেয়েও জড়িয়ে ধরেছে। মেয়েও কাঁদতে লাগল, আমিও কাঁদতে লাগলাম। মেয়ে আমার বড় কলিজার ধন।’ বিবৃতির বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়ে কিছু জানে না বলেছে। তিনি বলেন, ‘আগে পাঁচজন বিবৃতিতে সই করেছে, তারপর মেয়ে করেছে। জোর করে করানো হয়েছে কি না জানি না। মেয়েকে আলাদা রাখত।’ আবদুল হালিম বলেন, ‘আমরা শিক্ষক মানুষ, আল্লাহ যেন রহম করেন। দোয়া করবেন।’