গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে সরকারি কর্মচারী ও আনসার সদস্যদের ওপর হামলা এবং ইউএনওকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় হওয়া মামলার প্রধান আসামি কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মোক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বহিষ্কৃত ব্যক্তিরা হলেন মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল হেকিম মেম্বার, সদস্য জাকির হোসেন, ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য আকরাম হোসেন, ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল ফকির ও ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাইদুল।
কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আবু বকর চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপজেলা পরিষদ চত্বরে অশোভন আচরণ এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় এই ব্যক্তিদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
নিজের দায়িত্বের আওতাধীন না হলেও যুবলীগের নেতাদের বহিষ্কারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আবু বকর চৌধুরী বলেন, উপজেলা যুবলীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সই করেছেন।
মামলার এজাহার, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শহীদ ময়েজউদ্দিনের ৩৯তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে কালীগঞ্জ আরআরএন পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে গত শনিবার দুপুরে এক স্মরণসভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। স্মরণসভা উপলক্ষে দুপুরে বিভিন্ন এলাকার নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে শুরু করেন। মোক্তারপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একদল নেতা-কর্মী অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে জড়ো হন।
ওই সময় উপজেলা পরিষদ চত্বরে শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় কন্যা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান চলছিল। প্রথমে উপজেলা পরিষদের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গাড়ি চত্বরের বাইরে নিয়ে রাখার অনুরোধ করেন। কিন্তু নেতা-কর্মীরা এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুর রহমান নিজে সেখানে আসেন। তিনি ইউপি চেয়ারম্যানকে ডেকে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ লোকজন উপজেলা পরিষদে আসবেন। সম্ভব হলে নেতা-কর্মীদের গাড়ি যেন বাইরের খোলা জায়গায় নিয়ে রাখা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান উচ্চ স্বরে বাক্যবিনিময় শুরু করেন ইউএনওর সঙ্গে। সে সময় চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা এগিয়ে এসে ইউএনওসহ তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর চড়াও হন।
একপর্যায়ে তাঁরা ইউএনওর শার্ট ধরে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন সরকারি কর্মচারী ও আনসার সদস্যরা ইউএনওকে রক্ষা করার চেষ্টা করলে তাঁদের ওপর হামলা চালান নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা ইউএনওর কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ইটপাটকেল মারতে থাকেন। এতে কয়েকটি জানালার গ্লাস ভেঙে যায়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এ ঘটনায় শনিবার রাতেই কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করা হয়। এতে প্রধান আসামি করা হয় কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মোক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনকে। তিনি সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির চাচাতো ভাই।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন মো. জাকির হোসেন (৪৭), আকরাম হোসেন (৪৮), সিদ্দিকুর রহমান (৪৩), মো. কাজল (৩৪), মো. কামাল হোসেন ফরাজী (৩০), মো. হেকিম (৩৫), ফয়সাল ফকির (৪৫) মো. কালাম (৪০), জাহাঙ্গীর মেম্বার (৩০), রুবেল পালোয়ান (৩২), মনির হোসেন (৩৮), জাহিদুল হোসেন (২৮), সিরাজ উদ্দিন (৪৫) ও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফায়েজুর রহমান বলেন, মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।