গতকাল ১৪ দলের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সেই বৈঠক হয়নি আর আওয়ামী লীগের নেতারাও তাঁর সঙ্গে প্রচারে নামেননি।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে ১৪–দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ফজলে হোসেন গত বুধবার বলছিলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার ১৪ দলের বৈঠকের পরে আওয়ামী লীগ তাঁর সঙ্গে মাঠে নামবে। কিন্তু গতকাল সেই বৈঠক হয়নি আর আওয়ামী লীগের নেতারাও তাঁর সঙ্গে প্রচারে নামেননি। বরং স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথমে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছিল রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামালকে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষণার পরে তাঁকে নিয়ে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা আনন্দমিছিল করেছিলেন। ১৪ দলের মনোনয়ন ঘোষণার পরে মোহাম্মদ আলী কামালকে বাদ দিয়ে সেই নৌকা ফজলে হোসেন বাদশাকে দেওয়া হয়। বাদশা ২০০৮ সাল থেকে ১৪–দলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে টানা তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এবারও তিনিই মনোনয়ন পেলেন।
প্রতীক বরাদ্দের পর ১৮ ডিসেম্বর তিনি শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের কবরে ফুল দেন। ওই দিন বিকেলে তিনি নগরের কাশিয়াডাঙ্গা এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচার অভিযান শুরু করেন। প্রচারণার চার দিন পেরিয়ে গেলেও ফজলে হোসেনের প্রচার অভিযানে আওয়ামী লীগের নেতারা নামেননি।
গত বুধবার বিকেলে ফজলে হোসেন নগরের মহিষবাথান এলাকার দিগন্তপ্রসারী ক্লাবের কাছ থেকে প্রচার অভিযান শুরু করেন। সেখানে রাজশাহী কোর্ট স্টেশনের দিকে যান। এ সময় তিনি এলাকাবাসীর হাতে লিফলেট তুলে দেন এবং সৌজন্য বিনিময় করেন। ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা-কর্মীরা তাঁর পেছনে নৌকা মার্কার স্লোগান দিচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী ছিলেন না।
এ ব্যাপারে প্রচার মিছিলের শুরুতেই ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছিলেন, বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে ১৪ দলের সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকের পরেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে মাঠে থাকবেন।
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার ফজলে হোসেন বাদশা নগরের বিনোদনপুর এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। সেখানেও আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে তাঁর সঙ্গে দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে গতকাল সন্ধ্যায় ফজলে হোসেনের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগরের সভাপতি লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমন্বয় করার চেষ্টা করছেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য একাধিকবার মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলেও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল ফোন ধরেননি। তবে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক বলেন, এই আসনে নির্বাচনের জন্য নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছিলেন দলের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামালকে। ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে ফজলে হোসেন বাদশা পরে সেই প্রতীক পান। তাঁর (ফজলে) উচিত ছিল প্রতীক নিতে যাওয়ার সময় মোহাম্মদ আলী কামালকে ডাকা বা সঙ্গে নিয়ে যাওয়া। তিনি তা করেননি। ফজলে হোসেন তাঁর দলের নেতা-কর্মী নিয়ে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের কবর জিয়ারত করে ফুল দিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে তিনি সঙ্গে নেননি। এ পর্যন্ত প্রচার অভিযান চালাচ্ছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের কাউকে ডাকেননি।
আহসানুল হক বলেন, ১৪ দলের সমন্বয়কারী রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। এ পর্যন্ত ফজলে হোসেন বাদশা তাঁর কাছেও যাননি। এমনকি ফোনেও কথা বলেননি। গত ১৫ বছর ফজলে হোসেন সংসদ সদস্য রয়েছেন। কোনো দিন, কোনো কাজে তিনি আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে সঙ্গে নেননি। এখন নেতারা হয়তো দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মাঠে নামতে পারেন। কিন্তু তৃণমূলের আওয়ামী লীগকে মাঠে নামানো কঠিন হবে।
বুধবার সন্ধ্যায় এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমার সঙ্গে তিনি (ফজলে হোসেন বাদশা) কোনো কথা বলেননি। ডাকেননি। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকের কোনো কথা হয়নি। ১০-১২ দিন আগে মুঠোফোনে একটা খুদে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। এরপর তাঁদের সংগঠনের অন্য এক নেতা কথা বলেছেন। ’
এদিকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি একজন শিক্ষক নেতাও। তাঁর মনোনয়ন বাছাইয়ে বাতিল হয়েছিল। প্রতীক বরাদ্দের দিনে সর্বোচ্চ আদালত তাঁর প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেন। তিনি গত বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে কাঁচি মার্কা প্রতীক হাতে পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর দলিল লেখকদের কার্যালয়ে প্রচার অভিযানে শফিকুর রহমানের সঙ্গে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে দেখা যায়। ১৪–দলীয় জোটের প্রার্থীর ব্যাপারে শফিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা আদর্শিক জোট। নির্বাচনী জোট নয়। তাঁরা নৌকা চেয়েছিলেন। পেয়েছেন। নির্বাচনের বিষয়টি আলাদা।’