বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশ সামনে রেখে দুই দিন আগে বাস, ছোট যান বন্ধের পর এবার ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচলকারী সব লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লঞ্চমালিকেরা যাত্রীসংকটের অজুহাতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করেছেন।
আজ শুক্রবার বরিশাল থেকে চারটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ার কথা ছিল। সন্ধ্যার পর বরিশাল নৌবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, ঘাটে ‘পারাবাত-১৮ ’, ‘মানামী’, ‘সুরভী-৯ ’, ‘শুভরাজ’ ও ‘প্রিন্স আওলাদ-১০’ রয়েছে। প্রতিটি লঞ্চের প্রবেশপথ বন্ধ।
সুরভী শিপিং লাইনসের পরিচালক রেজিন উল কবির প্রথম আলোকে বলেন, লঞ্চশ্রমিকেরা তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে ধর্মঘট ডাকায় লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ধর্মঘট ডেকেছেন তাঁরা।
কীর্তনখোলা লঞ্চের মালিক মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস যাত্রীসংকটের কারণে লঞ্চ বন্ধ রাখার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার যাত্রী নেই। তাই লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। যে যাত্রী পাওয়া যাবে, তাতে লঞ্চের ব্যয় উঠবে না। আর্থিক ক্ষতি করে তো চালাব না। একইভাবে ঢাকা থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে আসবে না।’
আমরা কোনো ধর্মঘট ডাকিনি। সব করেছেন মালিকেরা। এখন সেই দায় আমাদের ওপর চাপাচ্ছেন। এটা দুঃখজনক।আবুল হাসেম মাস্টার, লঞ্চশ্রমিক ফেডারেশনের বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি
বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, আজ কোনো লঞ্চের কাউন্টার খোলেনি। ঢাকা যাত্রার জন্য যে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন, তা–ও নেওয়া হয়নি। লঞ্চ কেন যাবে না, কোনো মালিক তাঁদের জানাননি।
বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘কোনো মালিক আমাদের জানাননি লঞ্চ চলবে না। কিন্তু শুনেছি, আজ বরিশাল ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যাবে না। ঢাকায় খবর নিয়েছি। সেখান থেকে বরিশালের উদ্দেশে কোনো লঞ্চ ছেড়ে আসবে না।’
এদিকে লঞ্চশ্রমিক ফেডারেশনের বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি আবুল হাসেম মাস্টার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো ধর্মঘট ডাকিনি। সব করেছেন মালিকেরা। এখন সেই দায় আমাদের ওপর চাপাচ্ছেন। এটা দুঃখজনক।’
আজ সকাল ছয়টা থেকে বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে বাসমালিক গ্রুপ। পাশাপাশি তিন চাকার সব যানবাহনও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর আগে ভোলা-বরিশাল রুটে নৌযান, স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আজ সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ সব রুটে বন্ধ করে দেওয়া হয় ছোট লঞ্চ চলাচল।
আগামীকাল বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক)। এর এক দিন আগে বরিশালে বাস ও তিন চাকার যানের ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস সমিতিও নিরাপত্তার অজুহাতে তাদের সব গাড়ি চলাচল আজ সকাল থেকে বন্ধ রেখেছে। এরপর আজ অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার লঞ্চ ধর্মঘটের কারণে পুরো বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান বলেন, ‘পরিবহন-লঞ্চ বন্ধ করে মানুষকে আটকে রাখা যাবে না। সমাবেশস্থলে এত নেতা-কর্মী, তাহলে ভাবুন বরিশাল নগরীতে কত নেতা-কর্মী অবস্থান করছেন। সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটবে। সব ষড়যন্ত্র জনগণ নস্যাৎ করে দেবে।’