পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে ১০ ফুট লম্বা মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। আজ শুক্রবার সকালের জোয়ারের পানির সঙ্গে ডলফিনটি ভেসে আসে বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয় বাসিন্দা জনি আলমগীর বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট-সংলগ্ন পূর্ব পাশে আজ সকালে মৃত ডলফিনটি ভেসে থাকতে দেখা যায়। আজ সকালের জোয়ারের সঙ্গে মৃত ডলফিনটি ভেসে এসেছে। দুই থেকে তিন দিন আগে এটি মারা যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মৃত ডলফিনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের একটি ডোবায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পাওয়া যায় বোতলনোজ প্রজাতির একটি জীবিত ডলফিন। জোয়ারের পানিতে ভেসে ডলফিনটি ডোবায় আটকা পড়ে। উপকূলের স্বেচ্ছাসেবী প্রাণিকল্যাণ ও পরিবেশবাদী সংগঠন অ্যানিমেল লাভার অব পটুয়াখালীর কলাপাড়া টিমের সদস্যরা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ডলফিনটি উদ্ধার করেন। পরে গতকাল বিকেলে পাঁচটার দিকে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ডলফিনটিকে অবমুক্ত করা হয়। আজ সকালে বোতলনোজ প্রজাতির মৃত ডলফিনটি কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে এল।
উপকূলের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ অ্যাকটিভিটির একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত কুয়াকাটা সৈকত এলাকায় ৯টি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৮টি ডলফিন কুয়াকাটায় ভেসে এসেছে।
কুয়াকাটা-সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেদের সচেতন করতে কাজ করে কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এর দলনেতা রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, ‘আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই এবং বন বিভাগকে ডলফিন ভেসে আসার খবর জানাই। এর পর বন বিভাগের লোকজনসহ আমরা ডলফিনটি উদ্ধার করি এবং নিরাপদ স্থানে মাটিচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’
বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, খবর পেয়ে তাঁদের লোকজন ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। যাতে দুর্গন্ধ না ছাড়ায় এ জন্য মৃত ডলফিনটি দ্রুত মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।
ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ অ্যাকটিভিটির পটুয়াখালী জেলার সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, একের পর এক মৃত ডলফিন কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসছে। এটা বড় দুশ্চিন্তার বিষয়। সব সময়ই এ নিয়ে তাঁরা কথা বলে আসছেন। সমুদ্রের বন্ধু প্রাণী ডলফিনকে বাঁচাতে তাঁরা সাগরে মাছ ধরা জেলেদের সচেতন করতে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। কেন এসব ডলফিন মারা যাচ্ছে, তার সঠিক কারণ উদ্ঘাটন করা জরুরি।