সিলেটে থালায় চাল ও কচু আর শরীরে নানা স্লোগান লিখে ‘ভুখামিছিল’ করছেন সিলেটের চা-শ্রমিকেরা। আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে সিলেটের বিক্ষুব্ধ চা-শ্রমিকদের ব্যানারে সিলেট শহরতলির মালনীছড়া দুর্গামন্দিরের পাশে জড়ো হন শ্রমিকেরা। একপর্যায়ে তিন শতাধিক শ্রমিক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
সকাল থেকেই মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা-শ্রমিকদের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে মালনীছড়া এলাকা। সিলেটের বিভিন্ন বাগানের চা-শ্রমিকেরা সেখানে যোগ দিতে থাকেন। ভুখামিছিলে যোগ দেন তরুণ শ্রমিকেরাও। ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে তাঁদের বুকে ও পিঠে বিভিন্ন স্লোগান লিখতে দেখা গেছে।
বিপ্লব প্রধান নামের এক তরুণ তাঁর গায়ে লিখেছেন, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত; দালালির চুক্তি, মানি না মানব না।’ উজ্জ্বল মিয়া নামের আরেক শ্রমিকের পিঠে লেখা ‘৩০০ টাকা মজুরি দে, নাইলে বুকে গুলি দে।’ বনমালী সবর নামের এক শ্রমিক লিখেছেন, ‘প্রতারণার চুক্তি, মানি না মানব না; ২০-২৫ মানি না, ৩০০ ছাড়া বুঝি না।’
শ্রমিকদের গায়ে দাবি-সংবলিত স্লোগান লিখে দিচ্ছিলেন বাদল বাউড়ি নামের এক তরুণ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। বারবার তাঁদের মজুরি নিয়ে প্রহসন হয়েছে। এখন বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকেরা। ১৩ দিন ধরে আন্দোলনে থাকায় শ্রমিকেরা কোনো মজুরি বা রেশন পাননি। এ অবস্থায় অভুক্ত অবস্থায় আন্দোলন করছেন শ্রমিকেরা।
দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন শ্রমিকেরা। ধর্মঘটের অষ্টম দিনে গতকাল শনিবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে শ্রম অধিদপ্তর ও সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন চা-শ্রমিকনেতারা। বৈঠক শেষে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল ২৫ টাকা বাড়িয়ে মজুরি ১৪৫ টাকা করায় ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসে ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেন।
তবে ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেননি সাধারণ চা-শ্রমিকেরা। তাঁরা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সাধারণ শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে চা-শ্রমিকনেতা নিপেন পালও সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
এদিকে সিলেটের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে গতকাল রাতে বৈঠকে বসেন সিলেটের বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকনেতারা। এরপর ধর্মঘট স্থগিতের কথা জানিয়েছিলেন চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের কিছুক্ষণ পরই মত পরিবর্তন করেন তিনি। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ওই শ্রমিকনেতা। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে সিলেট ভ্যালির শ্রমিকেরাও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।