আপনারা যত চালাক, আইন তার চেয়ে বেশি চালাক: খাদ্যমন্ত্রী

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে অংশীজনদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন কুমার মজুমদার । রোববার বগুড়া শহরের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ‘মিলমালিকদের স্বভাবের কারণে চালকল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে আপনারা (মিলমালিকেরা) যত চালাক, আইন তার চেয়ে বেশি চালাক। আইন বসে থাকবে না। ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনো যুক্তি নেই। এখনই সাবধান হয়ে যান। নতুন আইন হচ্ছে। শুধু জরিমানাই নয়, প্রয়োজনে জেলেও যেতে হবে পারে।’

আজ রোববার বিকেলে বগুড়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণে অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা উঠে আসে। বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), বগুড়ার চালকল, আড়ত, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বগুড়া চালকল মালিক সমিতির সভাপতি, চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, বিভিন্ন বাজার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করে যুক্তি তুলে ধরেন। জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের দাম বাড়ানোর নেপথ্যে কতিপয় মিলমালিকের সিন্ডিকেট আছে। কুষ্টিয়ার দুজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন, নওগাঁর দুজন, দিনাজপুরের দুই থেকে তিনজন, ঝিনাইদহের দুজন এ সিন্ডিকেটে আছেন। তাঁরা সকালবেলা খুদে বার্তা চালাচালি করে চাল কী দামে বিক্রি হবে, কী দামে ধান কেনা হবে, সেটা ঠিক করে দেন। সুযোগ বুঝে অন্যরাও সেই দরে চাল বিক্রি করেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, যখন একটা শিয়াল ডাক দেয়, তখন সব শিয়াল একসঙ্গে ডাক দেয়। চালের ব্যবসার ক্ষেত্রেও তাই। চাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা শিয়ালের চেয়েও ধূর্ত।

সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, নির্বাচনের পর সরকার গঠনের অন্তর্বর্তী সময়ে সুযোগ বুঝে লোভী ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দেন। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তদারকি না থাকার কারণেই চাল ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলার সুযোগ পেয়েছে।

চালের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে সরকারের অভিযানের আগে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি খাদ্য কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, প্রতিটি উপজেলায় খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ও খাদ্য পরিদর্শক আছেন। তাঁরা কী করেন? চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে ইউএনও, জেলা প্রশাসক, সচিবদের অভিযানে নামতে হবে হবে কেন? খাদ্য কর্মকর্তারা কী করেন? খাদ্য কর্মকর্তারা যদি নিয়মিত চালকল এবং গুদাম পরিদর্শন করতেন তবে চাল নিয়ে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

মিলমালিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। মিনিকেট বলে কোনো চাল নেই। চাল উৎপাদনের সময় বস্তার গায়ে চালের জাত, মিলগেটে চালের দর, উৎপাদনের তারিখ উল্লেখ করতে হবে। নতুন আইনে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণনব্যবস্থায় কোনো অপরাধ পাওয়া গেলে অপরাধীর ন্যূনতম ১০ লাখ টাকা জরিমানা এমনকি জেলের বিধান রয়েছে। আইনটি কার্যকর হলে খাদ্য নিয়ে অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে।

পরস্পরকে দুষলেন ব্যবসায়ীরা

মতবিনিময় সভায় চালের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা, হাস্কিং, অটো রাইস মিল এবং করপোরেট গ্রুপের মালিক বা প্রতিনিধিরা চালের দাম বাড়ায় নিজেদের কারসাজির অভিযোগ নাকচ করে পরস্পরকে দায়ী করেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের দায়ী করেন। আর আড়তদারেরা মিলমালিকদের দায়ী করেন। অপর দিকে মিলমালিকেরা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আগ্রাসী ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ তোলেন।

সভায় রাজাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল হান্নান বলেন, বগুড়া জেলা প্রশাসন থেকে বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বাজারে অনেক বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। চালকলের মালিকেরা গোপনে হাজার হাজার মণ ধান মজুত করেছেন। প্রশাসন চাইলে তাঁরা মজুতদারদের সম্পর্কে তথ্য দিতেও প্রস্তুত আছেন।

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বলেন, অবৈধ মজুতের পাশাপাশি মিলমালিকেরা চাল বিক্রির রসিদে কম দর উল্লেখ করে বেশি দরে চাল বিক্রি করেন। চাল কেনাবেচার টাকা অন্য হিসাব নম্বরে লেনদেন হয়, যা একধরনের মানি লন্ডারিং।