ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ১২ কিলোমিটারজুড়ে যানজট তৈরি হয়েছে। দুপুরের পর থেকেই এই এলাকায় যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ঘরমুখী মানুষেরা। এ ছাড়া দিনভর যানজট ছিল ঢাকা-মদনপুর বাইপাস (এশিয়ান হাইওয়ে) সড়কের ১৫ কিলোমিটারজুড়ে।
আজ শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মহাসড়কের প্রায় ৯ কিলোমিটারজুড়ে যানজট ছিল।
এর আগে আজ বিকেলে সরেজমিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর সেতু থেকে ভুলতা চৌরাস্তা পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা গেছে। কোনো কোনো যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা বলছেন, মাত্র ১২ কিলোমিটার সড়ক পেরোতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছে। ঈদযাত্রায় এমন যানজটের ফলে বিরক্ত যাত্রীরা। জৈষ্ঠ্যের গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে তারা চেষ্টা করছে।
আজ বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহাসড়কটির ১২ কিলোমিটার ঘুরে বিভিন্ন স্থানে সড়ক নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেছে। যাত্রামুড়া এলাকায় সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত বেশকিছু ট্রাক ও এক্সকাভেটরকে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে দেখা গেছে। তারাব চৌরাস্তা, রূপসী বাসস্ট্যান্ড, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল মোড়ে মহাসড়ক দখল করে লেগুনা, ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড ছিল আগের মতোই। এসব অবৈধ স্ট্যান্ডে থাকা যানবাহনগুলো সড়ক আটকে যাত্রী ওঠানামা করছে।
যাত্রামুড়া বাজার ও তারাব থেকে ভুলতা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ দখল করে অলস বাস ও ট্রাক পার্কিং করে রাখতে দেখা গেছে। রূপসী, বরপা, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল মোড়গুলো রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনার দখলে ছিল। এ ছাড়া ভুলতা উড়ালসড়কের নিচের মহাসড়ক দখল করে গড়ে তোলা অন্তত ১২টি অবৈধ স্ট্যান্ডে শত শত যানবাহন পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়। মহাসড়কের ১২ কিলোমিটারজুড়েই তিন চাকার ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। সড়কজুড়ে গরুবাহী ধীরগতির ট্রাক ছিল চোখে পড়ার মতো।
পরিবার নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী ফয়েজ আলী। রূপসী মোড় এলাকায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, টিকিট প্রতি ১৮০ টাকা করে বেশি ভাড়ায় বাসে উঠেছেন। কাঁচপুর থেকে রূপসী আসতে তাঁদের দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। স্বাভাবিক সময়ে এই পথ পেরোতে পাঁচ থেকে সাত মিনিট সময় লাগে। যানজটের জন্য মহাসড়কের বিশৃঙ্খলা আর সড়ক নির্মাণের কাজকে দায়ী করেন এই যাত্রী।
ঢাকা–কিশোরগঞ্জ রুটে চলাচলকারী যাতায়াত পরিবহনের চালক আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সকালে ঢাকায় প্রবেশে চার ঘণ্টা যানজটে আটকে ছিলেন। যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বের হতে এক ঘণ্টা এবং কাঁচপুর থেকে রূপসী আসতে আরও দেড় ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকতে হয়েছে। ঈদের আগে সড়ক নির্মাণের কাজ বন্ধ না করা, লোকাল পরিবহন, সিএনজি, ইজিবাইক ও লেগুনাগুলোর যত্রতত্র যাত্রী উঠানামাসহ সড়কে শৃঙ্খলা না থাকায় এমন যানজট বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে সড়ক নির্মাণকাজ চলমান থাকায় আজ সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ঢাকা-মদনপুর বাইপাস সড়কের কাঞ্চন সেতু থেকে ভুলতা মোড় পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট ছিল। তবে গত দুই ঈদের মতোই ভোগান্তিহীন ছিল ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদযাত্রা।
যানজটের বিষয়ে ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আলী আশ্রাফ মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল থেকেই মহাসড়কে যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ। তাদের দাবির পরও ঈদের আগে সড়কটির নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি। কিছু কিছু গণপরিবহনের যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা, সড়ক আটকে সড়কের পাশের কারখানাগুলোর শ্রমিকদের পারাপার, ধীরগতির গরুর গাড়িসহ নানা কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে। মানুষের ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে তাঁরা কাজ করছেন।