চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন

আ.লীগ ও বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রচার শুরু হয়েছে জোরোশোরে
ছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকের মুখে সোনালী ব্যাংকসংলগ্ন পদচারী–সেতু। এটি ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের ডিজিটাল পোস্টারে। আরেকটু সামনে গেলে আইনজীবী ভবনে ঝুলছে শত শত ব্যানার, পোস্টার। এভাবে পুরো আদালত ভবনে পোস্টার ঝুলিয়ে ভোটারদের কাছে দোয়া, আশীর্বাদ ও ভোট চেয়েছেন প্রার্থীরা। পাশাপাশি ব্যস্ত প্রার্থীরাও। যাচ্ছেন ভোটারদের চেম্বারে চেম্বারে (কক্ষে)।

গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে চলছে এ প্রচার। নিজেদের অভ্যন্তরীণ ভোটাভুটিতে জয়ী হওয়ার পর মাঠের লড়াইয়ে জিততে নেমেছেন। দুটি প্যানেলের প্রার্থীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত। প্রার্থীর জন্য স্লোগান দিয়ে ভোট চাচ্ছেন তাঁদের অনুসারীরা। আবার কখনো মিছিলসহকারে যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। এতে সরগরম হয়ে উঠেছে আদালতপাড়া। তবে কার ব্যালটে সিল পড়ছে, সেটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও তিন দিন। ভোটাররা বলছেন, এবার আওয়ামী লীগসমর্থিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এবং বিএনপি–জামায়াতসমর্থিত ঐক্য পরিষদের প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।

আগামী রোববার  চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সমিতির মিলনায়তনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে।

সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ২১টি পদের বিপরীতে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগসমর্থিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এবং বিএনপি–জামায়াতসমর্থিত ঐক্য পরিষদের মোট প্রার্থী রয়েছেন ৪২। গতবার ১৯টি পদে নির্বাচন হয়েছিল। সেবার সম্পাদকীয় পদে ৯টিতে নির্বাচন হলেও এবার ১০টিতে হবে। নতুন যুক্ত হয়েছে ক্রীড়া সম্পাদকের পদ। এ ছাড়া গতবার নির্বাহী সদস্যপদ ছিল ১০টি এবার হয়েছে ১১। মোট ১০টি সম্পাদকীয় পদ এবং ১১টি নির্বাহী সদস্যপদসহ মোট ২১ পদে নির্বাচন হবে। একজন ভোটারকে ২১টি পদে ভোট দিতে হবে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা জানান, এবারও লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিরসমর্থিত আইনজীবীর মধ্যে। তবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সমমনা আইনজীবী সংসদ এবারও তাদের প্রার্থী দেয়নি। গতবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো তারা অংশগ্রহণ করেনি। সমন্বয় পরিষদ থেকে ২০০৫ সালে বেরিয়ে দল নিরপেক্ষ আইনজীবীরা এটি গঠন করেছিলেন। এরপর বিভিন্ন নির্বাচনের অংশ নিয়েছিলেন। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে তাঁরা জয়ও পান। গতবারের মতো এবারও তাঁদের ভোট টানতে উঠেপড়ে লেগেছেন প্রার্থীরা।

প্রচারে নেমেছেন আইনজীবীরা

আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগসমর্থিত সমন্বয় পরিষদ এবারের নির্বাচনে নিজেদের বিজয় ধরে রাখার চেষ্টায় আছে। আর পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছে ঐক্য পরিষদ। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১০টি পদে জয় লাভ করেছে আওয়ামী লীগসমর্থিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। সহসভাপতিসহ ৯টিতে জয় পেয়েছে বিএনপি-জামায়াতসমর্থিত ঐক্য পরিষদ। নির্বাচনে সমন্বয় পরিষদ থেকে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন আবু মোহাম্মদ হাশেম। একই পরিষদ থেকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন।

এবারের নির্বাচনে সমন্বয় পরিষদ থেকে সভাপতি পদে লড়ছেন মনতোষ বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক পদে বজলুর রশিদ। ২০০৪ সালে তাঁরা নির্বাচিত হয়েছিলেন।
জানতে চাইলে সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রার্থী মনতোষ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করবেন নির্বাচিত হলে। দল-মতনির্বিশেষে আইনজীবীদের কল্যাণের জন্য কাজ করবেন তাঁরা।

বিএনপি–জামায়াতসমর্থিত ঐক্য পরিষদের সভাপতি পদে এবার লড়ছেন নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক পদে হাসান আলী চৌধুরী। গতবারের নির্বাচনে নাজিম উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছিলেন ২ হাজার ৫৮ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিজয়ী সমন্বয় পরিষদের বর্তমান সভাপতি আবু মোহাম্মদ হাশেম ২ হাজার ৯৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বিএনপি–জামায়াতসমর্থিত সভাপতি প্রার্থী নাজিম উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আইনজীবীদের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি ও কল্যাণের জন্য কাজ করে যাবেন। গতকাল বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, প্রার্থীদের পক্ষে তাদের সহকর্মী আইনজীবীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। আদালত ভবনের বিভিন্ন কক্ষের বারান্দায় হেঁটে যাওয়া ভোটারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন প্রার্থীর পরিচিতিপত্র। আর হাসিমুখে চাচ্ছেন ওই প্রার্থীর জন্য একটি ভোট। আদালতের কার্যক্রম শেষ হওয়ায় চেম্বারে আসা আইনজীবীদের কক্ষে কক্ষে ছুটছেন প্রার্থীরা ভোটারের মন জয়ে।

প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে আদালত চত্বর

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিতে ভোটার রয়েছেন ৫ হাজার ১৯৭ জন। গতকাল এক ভোটার প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের আগের দুই দিন সরকারি বন্ধ থাকায় আদালত বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার শেষ দিন। কাকে ভোট দেবেন তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। তবে শেষ হাসিটা কারা হাসবে, সেটির জন্য রোববার রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার রতন কুমার রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে ব্যালট ছাপানো হয়েছে। এখানে নির্বাচনে চমৎকারভাবে গণতান্ত্রিক চর্চা হয়। নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে প্রার্থী পরিচিতি সভায় একই মঞ্চ থেকে প্রার্থীরা তাঁদের কর্মসূচি উপস্থাপন করে গতকাল বক্তব্য দিয়েছেন। এটি একটি অনন্য আয়োজন। নির্বাচনী প্রচারণায় গণতান্ত্রিক চর্চা ও আচরণ লক্ষণীয়। সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবার সহযোগিতা কামনা করেন জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী।