শেরপু‌রের না‌লিতাবাড়ী‌র বাতকু‌চি টিলাপাড়া গ্রামে গত শুক্রবার মৃত হাতিটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়
শেরপু‌রের না‌লিতাবাড়ী‌র বাতকু‌চি টিলাপাড়া গ্রামে গত শুক্রবার মৃত হাতিটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত হাতিকে মাটিচাপা, রাতে ওই স্থান ঘিরে বন্য হাতির চিৎকার

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ধানখেতে জেনারেটরের তারে জড়িয়ে মৃত বন্য হাতিকে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। গত শুক্র ও শ‌নিবার রাতে ওই স্থান ঘিরে অবস্থান করেছে ৫০–৫৫টি বন্য হাতির পাল। হাতির ডাকে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া আশপাশের ধানখেত নষ্ট করেছে হাতির পাল। এই পরিস্থিতিতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন গ্রামবাসী।

গত বৃহস্পতিবার রাতে বাতকুচি টিলাপাড়া গ্রামে ধানখেতে কৃষকদের দেওয়া জেনারেটরের তারে জড়িয়ে একটি বন্য হাতির মৃত্যু হয়। ওই রাতে ২৫–৩০টি হাতি ছিল। শুক্রবার থেকে ওই দলে আরও ২০–২৫টি হাতি যোগ দিয়েছে।

বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে হাতি মৃত্যুর ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে ১১ জনের নামে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা করেছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১০–১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় জেনারেটর চালক শহিদুল ইসলাম (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বন বিভাগ, পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার বিকেলে রাতকুটি টিলাপাড়া পাহাড়ের ঢালে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে দুজন ভেটেরিনারি সার্জন গিয়ে ময়নাতদ‌ন্তের আলামত সংগ্রহ ক‌রার পর সেখানেই হাতিটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়। শুক্রবার রাত থেকে ওই স্থানের আশপাশে ৫০–৫৫‌টি বন‌্য হা‌তি অবস্থান করছে। হাতির পালটি বাতকুচি গ্রামের পাহাড়ের ঢালে কৃষকের আমন খেত নষ্ট করে দিচ্ছে। গত এক সপ্তাহে বন্য হাতির পাল বাতকুচি, শমশ্চুড়া ও কোচপাড়া গ্রামের প্রায় ১০ একর জমির ফসল নষ্ট করে দিয়েছে।

বন্য হাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন খেত। শনিবার বিকেলে না‌লিতাবাড়ীর বাতকু‌চি গ্রামে

বাতকুচি টিলাপাড়া গ্রামের গৃহিণী আয়শা বেগম বলেন, ‘আত্তি (হাতি) মরনের পর থাইকা, আরও মেলা আত্তি এক লগে অইছে। যেমনে চিকার মারে, এতে পোলাপুরিসহ আমরা ডরে (ভয়ে) আছি। কহন আবার বাড়ি ঘরে আক্রমণ করে। হেই লাইগা আমরা ডরের মধ্যে আছি।’

বাতকুচি গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই দিন সন্ধ্যার পর থেকে হাতির পাল বিকট চিৎকার করছে। এতে গ্রামবাসী পরিবার পরিজন নিয়ে ভয়ে রাত কাটাচ্ছে। কোনো প্রতিরোধ না থাকায় হাতির পাল ধানখেত পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে।
মধু‌টিলা ইকোপা‌র্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা র‌ফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে ব‌লেন, হাতির পালকে পাহাড়ে ফিরিয়ে দিতে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যসহ বন বিভাগের লোকজন কাজ করছেন। পরিবেশ স্বাভাবিক হলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ পেতে বন বিভাগের কাছে আবেদন করতে বলা হবে।

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ‌ছানোয়ার হোসেন বলেন, হাতির মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল শনিবার একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।