ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়ে
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়ে

‘জীবন হতে হবে গণিতের মতো সুশৃঙ্খল’

শীতের সকাল। কনকনে ঠান্ডা। এরই মধ্যে সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছুটে এসেছে গাজীপুরের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়ে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে সকাল সোয়া নয়টায় শুরু হয় অনুষ্ঠান।

‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান সামনে রেখে গতকাল শনিবার গাজীপুরে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০২৪-এর আঞ্চলিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনাজপুরে। এতে অংশ নেয় এই জেলা ছাড়াও ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের শিক্ষার্থীরা। আগের দিন গত শুক্রবার রংপুর ও কুষ্টিয়া আঞ্চলিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আগামীকাল সোমবার (২৯ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জে অনুষ্ঠিত হবে গণিত উৎসব।

উৎসব আয়োজন করছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি, পৃষ্ঠপোষকতায় ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক ও ব্যবস্থাপনায় প্রথম আলো। এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে প্রথম আলো বন্ধুসভা।

গাজীপুরে সকালে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। উদ্বোধন করেন প্রধান শিক্ষক আখের আলী দেওয়ান। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যাপক অসীম বিভাকর, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক জয়দেবপুর ওয়ারলেস গেট উপশাখার সিনিয়র অফিসার ও ইনচার্জ মো. ছামিনুর ইসলাম। এ সময় উত্তোলন করা হয় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকাও। উৎসবে অংশ নিয়েছে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।

আলোচনা পর্বে অধ্যাপক অসীম বিভাকর বলেন, ‘আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে গণিত জড়িয়ে আছে। জীবনে তাঁরাই সফল হয়েছেন, যাঁরা সময়কে ঠিকভাবে ব্যবহার করেছেন। জীবনের হিসাবকে ঠিকভাবে মেলাতে পেরেছেন। সময়কে ঠিকভাবে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমরা জীবনকে সুন্দর করতে পারি। শুধু পরীক্ষার ক্ষেত্রে গণিত ব্যবহার নয়, জীবনের সব ক্ষেত্রে গণিতের ব্যবহার করতে পারি। জীবনকে গণিতের মতো সুশৃঙ্খল করতে হবে।’

উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠিত হয় এক ঘণ্টার পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে একদিকে চলে উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ, অন্যদিকে বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে বন্ধুতা পর্ব ও প্রশ্নোত্তর পর্ব নিয়ে অনুষ্ঠান। প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের মজার সব প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির একাডেমিক কাউন্সিলর সকাল রায়সহ মঞ্চে থাকা গণিত, পদার্থ ও রসায়নের শিক্ষকেরা।

উৎসব সঞ্চালনা করেন গাজীপুর বন্ধুসভার সহসভাপতি ইস্তিলা ইস্তি, বন্ধুসভার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক ইমদাদুল ইসলাম ও বন্ধুসভার সদস্য নাভানা আফরোজ (কাঁকন)।

মূল্যায়ন পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা। গতকাল দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে

দুপুরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়ার আগে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকেরা ছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যাপক অসীম বিভাকর, গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, প্রথম আলোর গাজীপুর প্রতিনিধি মাসুদ রানা, গাজীপুর সংবাদদাতা আল-আমিন, শ্রীপুর প্রতিনিধি সাদিক মৃধা, গাজীপুর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক বাবুল ইসলাম প্রমুখ।

উৎসবে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট স্কুলকে ভেন্যু স্মারক দেওয়া হয়। সব শেষে লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত ৪ ক্যাটাগরিতে ৩২ শিক্ষার্থী বিজয়ী হয়। তাদের ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় গণিত উৎসবে যোগদানের মেডেল পরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দেওয়া হয় টি-শার্ট।

গণিতকে বাদ দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়

‘গণিতের উন্নতির সঙ্গে সভ্যতারও উন্নতি হয়েছে। যেকোনো ধরনের গবেষণার ক্ষেত্রে গণিতের প্রয়োগ করতে হয়। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তাই গণিতে দক্ষ হয়ে উঠলে এবং গুরুত্বের সঙ্গে অধ্যয়ন করতে পারলে আমরা বিজ্ঞানচর্চায় অগ্রসর হব। গণিতকে বাদ দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়।’

দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গণিত অলিম্পিয়াডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। উৎসবে যোগ দিয়েছে তিন জেলা থেকে আসা চার শতাধিক গণিতপ্রেমী শিক্ষার্থী।

সকাল ৯টায় বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার সঙ্গে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জলিল আহমেদ। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক দিনাজপুর শাখার উপব্যবস্থাপক মোস্তফা হেলাল, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ সাদেকুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর ঈদগাহ বস্তি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান, প্রথম আলোর দিনাজপুর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম প্রমুখ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় মূল্যায়ন পরীক্ষা। ৪৪০ পরীক্ষার্থী এতে অংশ নেয়। পরে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। গণিতের গান দিয়ে শুরু হয় উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনোরঞ্জন রায়, মুস্তাফিজুর রহমান, শাহাদাৎ হোসেন, প্রভাষক মনীষ কুমার, নীলফামারীর ডোমার সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাস, বিরল উপজেলার দুপ্তইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক একরামুল হক, দিনাজপুর জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক শাহজাহান সাজুসহ ঢাকা থেকে আসা একাডেমিক দলের সদস্যরা।

প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে মাদক, মুখস্থ ও মিথ্যাকে হাত তুলে ‘না’ জানায় উপস্থিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। এ পর্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন দিনাজপুর বন্ধুসভার সভাপতি শুভ রায়, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শবনম মুস্তারিনা ও নির্বাহী সদস্য মুনিরা শাহনেওয়াজ চৌধুরী।

দুপুরে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় এবং তাদের জাতীয় উৎসবে যোগদানের মেডেল পরিয়ে দেন অতিথিরা। পাশাপাশি দেওয়া হয় টি-শার্ট। এর আগে দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষের হাতে ভেন্যু স্মারক তুলে দেওয়া হয়। গণিতের পরীক্ষায় জয়ী হয় ৪ ক্যাটাগরিতে ৩২ শিক্ষার্থী।