ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে জেলার ৮৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। লোকালয় প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন। প্লাবিত হয়েছে দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে। আজ শনিবার সকালে এমন পরিস্থিতির কথা জানা যায়।
জেলা শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানিতে জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৮৬টি বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৩টি ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৩টি। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ১৯টি, ইসলামপুরের ১৬, মাদারগঞ্জের ১৫, মেলান্দহের ২ ও সরিষাবাড়ি উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে।
জেলা মধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম মোজাম্মেল হক বলেন, জেলায় ৩৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকেছে। শুক্র ও শনিবার দুই দিন সরকারি বন্ধ। তাই বন্ধ ঘোষণার প্রয়োজন হয়নি। এ অবস্থা থাকলে বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করতে হবে।
আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার প্রধান সড়কের বেলতলী বাজারে গিয়ে হাঁটুপানি দেখা যায়। অনেক দোকানে ঢুকেছে পানি। বাজারের পশ্চিম পাশে দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন। স্টেশনের ১ নম্বর লাইন পর্যন্ত পানি উঠেছে। প্লাবিত হয়েছে স্টেশন প্রাঙ্গণ। ৩ নম্বর ও ৪ নম্বর রেললাইন তলিয়ে গেছে। চারপাশের সব রাস্তা আছে ডুবন্ত অবস্থায়। শুধু প্ল্যাটফর্মে পানি ওঠেনি। বিভিন্ন এলাকার বন্যার্ত মানুষ প্ল্যাটফর্মে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
রেলস্টেশনে আবুল হোসেন নামে এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, জরুরি কাজে জামালপুর শহরে যাবেন। এখন একটি লোকাল ট্রেন জামালপুরে যাবে। এই ট্রেন ধরার জন্য হাঁটু পানি মাড়িয়ে স্টেশনে এসেছেন। বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশনের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুল বাতেন প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিন থেকে স্টেশন প্রাঙ্গণে পানি এসেছে। কয়েকটি লাইন ডুবে গেছে। ১ নম্বর লাইনের পাথর পর্যন্ত পানি। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে। আরও পানি বাড়লে, তখন ট্রেন চলাচলে সমস্যা হতে পারে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৯টার দিকে যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। লোকালয়ে পানি ঢুকে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন নদীতীরবর্তী ও দুর্গম চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।
জামালপুর পাউবোর পানি পরিমাপক আবদুল মান্নান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার থেকে যমুনার পানি বেড়ে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন, চিনাডুলী, পাথর্শী, সাপধরী, বেলগাছা, কুলকান্দি, নোয়ারপাড়া, পলবান্দা; দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন, চিকাজানী, চুকাইবাড়ী, বাহাদুরাবাদ, চরআমখাওয়া, ডাংধরা, পাররামরামপুর, হাতিভাঙ্গা, পৌরসভার আংশিক; মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া, আদ্রা, মাহমুদপুর, নাংলা, কুলিয়া; মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ও জোড়খালী ইউনিয়নের এলাকা প্লাবিত হয়। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য, দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী।