শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বাসিন্দা আসিয়া বেগমের উঠোনে এসে ঠেকেছে ভোগাই নদ। যেকোনো সময় নদে বিলীন হয়ে যেতে পারে পুরো ভিটেমাটি। সহায়–সম্বলহীন পাঁচ সদস্যের পরিবারটি ঝুঁকি নিয়েই সেখানে বসবাস করছে
শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বাসিন্দা আসিয়া বেগমের উঠোনে এসে ঠেকেছে ভোগাই নদ। যেকোনো সময় নদে বিলীন হয়ে যেতে পারে পুরো ভিটেমাটি। সহায়–সম্বলহীন পাঁচ সদস্যের পরিবারটি ঝুঁকি নিয়েই সেখানে বসবাস করছে

‘গাঙ্গে ঘরটা ভাইঙ্গা নিলে এই বয়সে কই যামু’

‘ঘুমের মধ্যে যদি গাঙ্গে (নদী) ঘরটা ভাইঙ্গা নেয়—এমুন দুশ্চিন্তায় রাইতে ঘুম আয়ে না। গাঙ্গে ঘরটা ভাইঙ্গা নিলে এই বয়সে কই যামু, কই থাকমু?’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ফ‌কিরপাড়া গ্রা‌মের বাসিন্দা আসিয়া বেগম (৭০)।

গত বৃহস্পতিবার পাহাড়ি ঢলের তোড়ে আসিয়া বেগমের বাড়িসংলগ্ন ৫০ মিটারের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে এই বৃদ্ধার ২ শতাংশ জমির ওপর থাকা একটি টিনের ঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। যেকোনো সময় নদে বিলীন হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ঘরটিতে এখনো আছে পাঁচ সদস্যের পরিবারটি।

উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামে ভোগাই নদের তীরের ওই জমিতে এক ছেলে, ছেলের বউ ও দুই নাতনি নিয়ে বসবাস করে আসছেন আসিয়া। তিনি জানান, প্রায় ১৮ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যাওয়ার সময় ২০ শতাংশ জমির ভিটেমাটি রেখে যান। এখন সেটি ভাঙতে ভাঙতে নদে বিলীন হয়ে মাত্র ২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আসিয়ার পরিবার জানায়, প্রতিবছরই ভোগাই নদের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে আসিয়া বেগমের বাড়ির ভিটা নদে ভেঙে পড়ে। ভাঙতে ভাঙতে এখন সেটা মাত্র ২ শতাংশ জমি নিয়ে তৈরি একটি ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ওই ভিটেমাটিটুকু ছাড়া আর কোনো সম্বল নেই আসিয়ার। আট বছর ধরে তাঁর একমাত্র ছেলে বজলুর কিডনি রোগে আক্রান্ত। আগে দিনমজুরের কাজ করলেও এখন কোনো কাজেই যেতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসারের হাল ধরে রেখেছেন বৃদ্ধা আসিয়া।

আসিয়ার প্রতিবেশীরা জানান, প্রতিবছর ভোগাই নদের ভাঙনে ওই বৃদ্ধার বসতভিটার জমি প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু ঘরটা পড়ে আছে। এটাও নদ গিলে ফেললে গেলে পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।

গতকাল রোববার বি‌কে‌লে সরেজমিন দেখা গেছে, ভাঙনের কবলে পড়েছে আসিয়া বেগমের ঘরটি। একেবার উঠান পর্যন্ত ঠেকেটে নদী। যেকোনো সময় ঘরটি ভেঙে নদে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় কিছু আসবাব সরিয়ে আরেকটি বাড়িতে রেখে এসেছেন।

আসিয়ার প্রতিবেশীরা জানান, প্রতিবছর ভোগাই নদের ভাঙনে ওই বৃদ্ধার বসতভিটার জমি প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু ঘরটা পড়ে আছে। এটাও নদ গিলে ফেললে গেলে পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলো‌কে বলেন, ওই এলাকায় পাহাড়ি ঢ‌লে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ‌ থে‌কে সহায়তা পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। ত‌বে ওই পরিবারের বিষয়ে খোঁজখবর নি‌য়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।