নিয়ম লঙ্ঘন করে বাড়ির দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। গতকাল হাকিমপুর পৌর শহরের চুড়িপট্টি এলাকায়
নিয়ম লঙ্ঘন করে বাড়ির দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। গতকাল হাকিমপুর পৌর শহরের চুড়িপট্টি এলাকায়

আচরণবিধি লঙ্ঘনের ‘ঢল’, ব্যবস্থা নেই

দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট) আসনে মহল্লায় মহল্লায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। তবে এসব ঘটনায় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

নির্দিষ্ট সময়ের পরও মাইকে উচ্চ শব্দে নির্বাচনী প্রচার মাইক চালু রাখা, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছে নির্বাচনী পোস্টার ঝোলানো, জনসভায় ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া, প্রতিপক্ষকে বাধা, প্রার্থীর পক্ষে সরকারি সুবিধাভোগী জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচনী প্রচার, ভোট চাওয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা-২০০৮ (সংশোধনী-২০২৩)–এর ১১–এর ‘ক’ ধারা অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য প্রদান বা কোনো ধরনের তিক্ত বা উসকানিমূলক বা মানহানিকর কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে, এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না।

১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকে দিনাজপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের নৌকা প্রতীক ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল হক চৌধুরীর ট্রাক প্রতীকের পক্ষে নেতা-কর্মীরা প্রচার শুরু করেন। তাঁরা বেশ কিছু জনসভাও করেছেন। এসব জনসভায় দুই প্রার্থী ও প্রার্থীর নেতা-কর্মীরা প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। এতে যেকোনো সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।

কয়েক দিনে চারটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী জনসভায় নৌকা প্রতীকের সংসদ সদস্য প্রার্থী শিবলী, তাঁর কর্মী এবং বিরামপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র আককাস আলী, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) ও সাবেক সংসদ সদস্য আজিজুল হক চৌধুরী, তাঁর কর্মী, বিরামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল আলম, নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমানসহ অনেক কর্মী-সমর্থককে উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।

গত শনিবার নবাবগঞ্জের গোলাপগঞ্জ বাজারে নির্বাচনী এক জনসভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শিবলী সাদিকের কর্মীদের উদ্দেশে স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী প্রতিদিন তিন-চারজনকে চার শ-পাঁচ শ টাকা দেওছে, টাকা দিয়ে ফটো তুলে ভাইরাল করে। একজনের (শামীম হোসেন) চুল দেখেন কোঁকড়ানো। মোর বাড়ির ধারে একজন আছে, রিপন না কী নাম, ওই একটা ফটোগ্রাফার। এ্যালা সব ফটোগ্রাফার, এ্যালার সব ফটোগ্রাফি বন্ধ হবি।’

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা-৪–এর ১ ধারা অনুযায়ী, কোনো সরকারি কার্যালয়কে কোনো দল বা প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে প্রচারের স্থান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

গত শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে বিরামপুর পৌরসভার সম্মেলনকক্ষে নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী বৈঠক করেন করে পৌর মেয়র আককাস আলী। সেখানে উপজেলার বেশ কয়েকজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি (ইউপি চেয়ারম্যান) ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া কোনো কোনো এলাকার নির্বাচনী জনসভায় ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও গ্রাম পুলিশ সদস্যকে ব্যবহার করতেও দেখা গেছে।

২১ ডিসেম্বর বিরামপুরের কেটরা বাজারে সন্ধ্যায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল হক চৌধুরীর জনসভায় তাঁর কর্মী হাসুন চৌধুরীকে নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকেরা মারধর করেন। এ ঘটনায় আহত হাসুন চৌধুরী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ এখনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।

এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলার নির্বাচনকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুরাদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ-পরিস্থিতি তদারকি করার জন্য আমি এবং ইউএনও মহোদয় প্রতিদিনই বের হচ্ছি। যখনই কোথাও নির্বাচনী বিধিমালা লঙ্ঘনের খবর পাচ্ছি, সেখানে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সতর্ক করছি। নির্বাচনী বিধি মেনে প্রচারণা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করছি।’